বাচ্চার বদমেজাজ ও চিৎকার-চেঁচামেচি কেন হয়? সবার জন্য শিক্ষণীয় পোস্ট…

পাশের বাড়ির ভাবী এসেছেন বাসায়। আপনার আড়াই বছরের মেয়েটিকে ওর খেলনাগুলো দিয়ে কাছেই বসিয়ে দিলেন ভাবীর মেয়ের সাথে খেলতে। গল্প করছিলেন আপনারা, হঠাত চিৎকার শুনতে পেলেন। দৌড়ে গিয়ে দেখলেন আপনার মেয়ে অতিথির মেয়েকে মারছে, তার হাত

থেকে নিজের খেলনা কেড়ে নিচ্ছে। সেই সাথে সমান তালে দুইজনই চিৎকার করে কাঁদছে। অপ্রস্তুত দুই মা সাথে সাথে রিএক্ট করে ফেললেন। আপনি মেয়েকে দুইটা মার লাগিয়ে দিলেন। প্রতিবেশি ভাবীও নিজের মেয়েকে টেনে নিয়ে বকা শুরু করলেন, ওকেই দোষারোপ করতে থাকলেন। চিৎকারের মাত্রা আরো বেড়ে গেল। আপনার মেয়ে কিছুতেই নিজের খেলনা শেয়ার করতে রাজি না।আপনার তিন বছরের একমাত্র

ছেলেটি খাওয়া নিয়ে অনেক ঝামেলা করে। মুখ থেকে থু করে ফেলে দেয়, জোর করে খাওয়াতে গেলে জেদ করে হাতের কাছে যা পায় ছুড়ে ফেলতে থাকে।আপনার দুই বছরের মেয়েটি মোবাইলে কার্টুন দেখছিল। একটা জরুরি ফোন করার জন্য হাত থেকে নিয়ে নিলেন আর সাথে সাথে শুরু হলো ছেলের চিৎকার। আপনি দিচ্ছেন না বলে একসময় মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি খেতে লাগল। কাজেই বাধ্য হয়ে ওকে থামানোর জন্য তাড়াতাড়ি কাজ সেড়ে ফোনটা দিয়ে দিলেন হাতে।শূন্য থেকে চার বছরের নিচের বাচ্চারা আক্ষরিক অর্থেই অবুঝ শিশু। ওরা যখন জেদ

করে তা হলো রাগ আর হতাশার বায়োলজিক্যাল রেসপন্স। জোরে একটানা চিৎকার করতে থাকা, উলটো হয়ে পড়ে যাওয়া, হাত পা ছুড়তে থাকা, দম আটকে কাশতে কাশতে বমি করে দেয়া –এগুলোকে টেম্পার ট্যান্ট্রাম (temper tantrum) বলা হয়। টেম্পার ট্যান্ট্রাম সাধারণত দুই থেকে চার বছর বয়সীদের মাঝে বেশি দেখা যায়। সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে না পারা, নিজের কিছু শেয়ার করতে না চাওয়া – এগুলোও এই বয়সী শিশুদের বৈশিষ্ট্য। এর প্রতিকার সম্পর্কে জানার আগে আসুন জেনে নেই এর কারণ সম্পর্কে। আমাদের মানবিক আবেগ-অনুভূতির

প্রকাশ ও সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (prefrontral cortex) নামের অংশ থেকে। এই অংশটি আমাদের ব্রেইনের অন্যান্য অংশের চাইতে সবচেয়ে দেরিতে ডেভেলপ হয়, এটি চার বছর বয়স থেকে পরিপূর্ণতা লাভ করতে শুরু করে। ঠিক একারণেই চার বছরের আগে শিশুদের সামাজিকতা আর মানবিক আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে ইম্যাচিওর্ড ধরা হয়। আর তাই এই বয়সে ওরকম জেদ অথবা অসামাজিক আচরণ করাটাই স্বাভাবিক।চার বয়সের নিচের বাচ্চারা যুক্তি-তর্ক বোঝে না। চারপাশের সাধারণ ব্যাপার স্যাপার আমাদের কাছে

স্বাভাবিক মনে হলেও ওদের কাছে তা দশ গুন বিভ্রান্তিকর। যেমন – পানির ফিল্টারের ট্যাপ ছেড়ে দিলে কী সুন্দর করে পানি পড়তে থাকে, বড়রা কেন এতে রাগ হয় তা ওর ছোট্ট মাথায় ঢোকে না।চকলেট, চিপস, আইস্ক্রিম খেতে কি মজা! বড়রা কেন খেতে নিষেধ করে তা কি ও বোঝে? ছোট ভাইয়ার খেলনা ওর খেলতে ইচ্ছা করলে কেড়ে নিতেই পারে, এতে ওকেই কেন বকা দেয়া হবে? কার্টুন যে সময়টা সবচেয়ে বেশি মজা লাগতে থাকে, ঠিক তখনই মা আর দেখতে দেয় না! এসব কারণে জেদ করাটাই কি স্বাভাবিক না?এই বয়সের শিশুরা যা বোঝাতে

চায় বা বলতে চায় তা প্রকাশ করার সঠিক ভাষা ওর জানা থাকে না। বড়রা কি চায় তা-ও অনেক সময় বুঝতে কষ্ট হয়।টেম্পার ট্যান্ট্রাম মূলত যে সব কারনে হয়ে থাকেঃ ক. অনুভূতি প্রকাশের অযোগ্যতা খ. স্বাধীনভাবে ইচ্ছেমত কিছু করতে না পারা গ. পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা ঘ. ক্ষুধা, একঘেয়েমি, ক্লান্তি, বিষণ্ণতা ও অতিরিক্ত উত্তেজনা এবার আমরা জানব এই সমস্যাগুলো কেমন করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ১. রুটিন মেনে চলুন প্রতিদিনের খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম, খেলার একটা প্রাত্যহিক রুটিন সেট করে ফেলুন। দিনের প্রত্যেকটা কাজ সময়মত হলে বাচ্চার মেজাজ ঠিক থাকে। মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলে অহেতুক জেদ করবে না, অল্পতে কষ্ট পেয়ে অসামাজিক আচরণও করবে না। যৌথ

পরিবারে রুটিন মেনে চলা মুশকিল, তবে একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু সম্ভব। ২. ব্যস্ত রাখুন, সময় দিন আপনার শিশুর ক্ষুধা, একঘেয়েমি, ক্লান্তি, বিষন্নতা ও অতিরিক্ত উত্তেজনা এড়াতে তার প্রয়োজনগুলো যথাসময়ে পূরণ করুন। এমন রুটিন সেট করবেন না যা বাচ্চার জন্য মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। বাসায় সবসময় হেলদি স্ন্যাকস, ফল ইত্যাদি রেডি রাখুন, বাচ্চার সময় কাটানোর প্রয়োজনীয় উপকরণও (খেলনা, বই ইত্যাদি) যেন হাতের কাছেই থাকে।ঘুমানোর আগের সময়টা উত্তেজনাকর খেলাধুলা থেকে দূরে রাখুন। ওইসময় বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়লে (যেমন দৌড়ঝাঁপ করা, অতিরিক্ত দুষ্টুমি, খিলখিল করে হাসা..) সহজে বিছানায় যেতে চাইবে না।৩. নিষেধাজ্ঞার কারনগুলো দূর করুন “এটা

ধরো না”, “ওটা নিও না” অথবা “ওখানে যেও না”, “না, এটা কোর না”… এসব কথা যেন বলা না লাগে সেই ব্যাবস্থা করুন। অর্থাৎ, বাচ্চার জন্য বিভ্রান্তিকর, বিপদজনক এমন যে কোন কিছু ওর হাতের নাগাল থেকে সরিয়ে ফেলুন। আপনি যে ওর ভালোর জন্য বলছেন তা এই বয়সে ওর বোঝার কথা না। ঘরটাকে এমন রাখুন যেন ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে।৪. স্বাধীনভাবে বেছে নিতে দিন খাওয়ার সময় ওর কাছে জানতে চান কোনটা খেতে চায় – এটা নাকি ওটা? সিম্পল অপশন দিন। জামা পরানোর সময় কোন রঙ পরবে জানতে চান – নীল

নাকি সাদা? কিছু ব্যাপার ওর নিয়ন্ত্রণে আছে বুঝতে দিন।৫. “হ্যা/না” বলুন, “হয়তো/হতে পারে” নয় অস্পষ্ট, বিভ্রান্তিকর উত্তর দেয়া দেখে বিরত থাকুন। যখন বুঝতে পারে না আপনি কী বলতে চাচ্ছেন, ও তখন রেগে যায় আর জেদ করতে থাকে। অথচ এটা প্রকাশ করতে পারে না যে সে আপনার কথা বুঝতে পারছে না। কাজেই হ্যা অথবা না, যা বলবেন স্পষ্ট করে বলবেন। যেটা হ্যা বলবেন, সেটা না যেন না হয় খেয়াল রাখবেন। অনেক সময় বাচ্চারা আপনার মনোযোগ পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেদ, কান্নাকাটি করে থাকে। ওকে পর্যাপ্ত সময় দিন।

খাওয়ানো, ঘুম পারানোর কাজে না, এমনি বসে একটু খেলা করুন ওর সাথে। ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে অথবা লং জার্নিতে – এমন কোন সময় যখন দীর্ঘক্ষণ ওকে আপনার সাথে বসে থাকা লাগবে; ওর সাথে কথা বলুন, গেইম খেলুন।এখন জেনে নেই জেদী বাচ্চাকে শান্ত করার কিছু উপায়। ১. জেদ শুরু হওয়ার সাথে সাথে, বা শুরু হতে যাচ্ছে বুঝতে পারলেই তাকে হাসানোর চেষ্টা করুন। যেমন একটা কলা নিয়ে কানে ফোনের মত ধরে হ্যালো হ্যা

About Susmita Roy

Check Also

আধার কার্ডে মোবাইল নম্বর আপডেট করার সহজ পদ্ধতি

আধার কার্ডে মোবাইল নম্বর আপডেট করার সহজ পদ্ধতি জেনে নিন

আধার কার্ড ভারতে একটি অপরিহার্য নথি যা অনেক সরকারী এবং অন্যান্য বিভিন্ন কাজের জন্য প্রয়োজনীয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *