ঘরে বসে চুল কালার করুন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই!
Image: google

ঘরে বসে চুল কালার করুন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই!

ঘন কালো চুল দেখতে বেশ দারুণ লাগে, যদি চুলটা রঙিন হয় তাও কিন্তু মন্দ হয় না। আমরা সাধারণত চুল রঙিন করার জন্য পার্লার বা ব্র্যান্ডের কালারের সাহায্য নেই। এগুলো যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি এসব পদ্ধতিতে চুল কালার করলে যথেষ্ট সাবধানে থাকতে হয়। একটু উনিশ-

বিশ হলেই চুলের সাড়ে সর্বনাশ হতে দেরি লাগে না৷ তাহলে উপায়? চিন্তা নেই, এবার ঘরে বসে চুল রঙিন করুন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। কিভাবে করবেন, তা জানতে হলে পড়ে ফেলুন এই লেখাটি।

1. দারচিনি ও লবঙ্গঃ ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ দারচিনি পাউডার ও ১ চা চামচ লবঙ্গ মিশিয়ে ১ ঘন্টা ফুটিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণটি নামিয়ে ঠান্ডা করুন। চুল প্রথমে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে এরপরে মিশ্রণটি চুলে মেখে ২০ মিনিট রেখে দিন। তারপর শুধু পানিতে চুল ধুয়ে নিন। চুলে গাঢ় বাদামি রং চলে আসবে।
2. আখরোটঃ ২ টেবিল চামচ আখরোট গুঁড়া ৪ কাপ পানিতে মিশিয়ে গরম করুন। রাতে ঘুমানোর আগে এটা করবেন যাতে মিশ্রণটি ঠান্ডা করে সারারাত রেখে দেয়া যায়। সকালে আগে চুলে শ্যাম্পু করবেন, তারপরে এই মিশ্রণটি দিয়ে চুল ধুয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। তারপরে পানি দিয়ে আবার চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলকে গাঢ় বা কালচে লাল করতে আখরোটের পানি দারুণ কাজে দেয়।

3. চাঃ চুলে লালচে ভাব আনতে চা কয়েকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। ৫ কাপ পানিতে ৩ টেবিল চামচ চায়ের দানা দিয়ে ১ ঘন্টা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধোয়ার পরে চায়ের পানিটা দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে নিন। ১০ মিনিট পরে আবার স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। ৬ টি টি-ব্যাগ বা ৬ টেবিল চামচ চায়ের দানা দিয়ে কড়া লিকারের চা বানিয়ে নিন। তারপর এতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মেশান। ঠান্ডা করে নিন। শ্যাম্পু করে চুলে এই মিশ্রণ ৩০ মিনিট মেখে রাখুন। সবশেষে হালকা গরম পানিতে চুল ধুয়ে নিন। ৬

কাপ পানিতে ৫ টেবিল চামচ চায়ের দানা আর ৫টি তুলসীপাতা একসাথে ফুটিয়ে নিন। নামিয়ে ছেঁকে ঠান্ডা করে নিন এবং তাতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মেশান। শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধোয়ার পরে মিশ্রণটি দিয়ে চুল ধুয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। ৭টি গ্রিন টি-এর টি ব্যাগ আর ২টি রোজমেরি পাতা ১০ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। মিশ্রণটি ঠান্ডা করে চুলে ১ থেকে ২ ঘন্টা লাগিয়ে রাখুন। গাঢ় রং চাইলে ২ ঘন্টার পরেও আরো কিছুক্ষণ রাখুন। এরপর শুধু পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।

4. ঝিঙেঃ ১ টেবিল চামচ ঝিঙে কুচি ৫ টেবিল চামচ নারিকেল তেলে ৩ দিন ভিজিয়ে রাখুন। এরপরে তেলটি ফোটাতে থাকুন। যখন তেলটি কালো রং হয়ে আসবে তখন চুলা বন্ধ করে তেল ঠান্ডা করে নিন। এরপরে ছেঁকে চুলে মাসাজ করে নিন। ১ ঘন্টা পরে শুধু পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।

5. কফিঃ চুলকে গাঢ় বাদামি এবং পাকা চুল কালো করতে কফির জুড়ি নেই। জেনে নিন কফি দিয়ে কিভাবে চুল রং করবেন। প্রথমে ৩টি টি-ব্যাগ ৩ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। এরপর এতে ৩ টেবিল চামচ কফির দানা এবং ১ টেবিল চামচ চিনি দিয়ে আরো ৫ মিনিট ফোটান। মিশ্রণটি ঠান্ডা করে চুলে মাখিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দিন। এরপরে পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। ৫ টেবিল চামচ কফির দানা নিয়ে কড়া করে কফি বানিয়ে নিন। কফির রংটা যত গাঢ় হবে তত আপনার চুলের ন্যাচারাল কালারের সাথে মিলে যাবে, আর এতে চুলও দারুণ শাইনি হবে।

ফোটানো হলে ঠান্ডা হতে দিন। ঈষদুষ্ণ অবস্থায় কফিটা স্প্রে বোতলে ভরে নিন। পুরো চুল আর স্ক্যাল্পে স্প্রে করে ভালোমতো মাসাজ করে নিন। ১ ঘন্টা চুল শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখুন, তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। ১ কাপ কড়া কফিতে ১ কাপ লিভ-ইন কন্ডিশনার মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে সমানভাবে লাগিয়ে ১ থেকে ২ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপরে চুলে শ্যাম্পু করুন। ১ টেবিল চামচ কফি পাউডার, ৩ টেবিল চামচ আমলা পাউডার, এবং ৩ টেবিল চামচ হেনা পাউডার দিয়ে ঘন পেস্ট বানিয়ে নিন। শুকনো চুলে এই পেস্ট লাগিয়ে ২ ঘন্টা রেখে দিন। এরপরে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

6. হেনাঃ চুল রঙিন করতে হেনার ব্যবহার সবচাইতে পুরনো এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি। এটি চুলের সৌন্দর্যে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। কফি এবং চায়ের মতো হেনাও কয়েকভাবে চুল রং করার জন্য ব্যবহার করা যায়। ৫ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েলে ১ টেবিল চামচ হেনা পাউডার মিশিয়ে ফোটান। তেলে যখন হেনার রং পুরোপুরি চলে আসবে তখন চুলা বন্ধ করে মিশ্রণটি ঠান্ডা হতে দিন। এরপরে এটি চুল আর চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ২ ঘন্টা রেখে দিন। তারপরে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলের দৈর্ঘ্য বুঝে সমপরিমাণ হেনা পাউডারের আর টকদই বা চায়ের পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে পারেন। পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দিন। সবশেষে শ্যাম্পু করে ফেলুন।

7. বিটঃ বিটের রস চুল লাল বা ডার্ক ব্রাউন করার জন্য অব্যর্থ ওষুধ। খুব সহজেই বিট দিয়ে রাঙিয়ে নিতে পারেন পাকা চুল এবং স্বাভাবিক কালো চুল। ৩ টেবিল চামচ বিটের রস আর ৩ টেবিল চামচ নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দিন এবং তারপরে শ্যাম্পু করে ফেলুন। একটি বিটের অর্ধেকটা নিয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিন। পরিমাণমতো পানিতে ৫ মিনিট সিদ্ধ করে রস করে নিন। এরপর রস ছেঁকে তাতে ৩ টেবিল চামচ হেনা পাউডার মিশিয়ে মোটামুটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। আগের রাতে পেস্ট বানিয়ে রাখলে সেটা চুলে ভালো রং আনবে। সকালে এই পেস্ট চুলে লাগিয়ে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা রেখে দিবেন। শ্যাম্পু করে ফেলুন। ৩-৪ বার ব্যবহারেই চুলে রং আসবে।

8. কাঠবাদামঃ কাঠবাদামের খোসা গুঁড়া করে নিন। ১ কাপ পানিতে ৩ টেবিল চামচ খোসা গুঁড়া দিয়ে ৩০ মিনিট ধরে ফোটান। ঠান্ডা করে চুলে আর স্ক্যাল্পে হাত দিয়ে অথবা তুলো দিয়ে অথবা স্প্রে করে লাগান৷ ১ ঘন্টা পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এই খোসা চুলে দারুণ সুন্দর একটা বাদামি রং এনে দিবে। পেঁয়াজঃ পেঁয়াজ ঘন করে বেটে ২ টেবিল চামচ পরিমাণ নিয়ে স্ক্যাল্পে মাসাজ করে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। শুকিয়ে গেলে শুধু পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। টানা ১ সপ্তাহ এভাবে ব্যবহার করুন, পাকা চুল ঢাকা পড়বেই পড়বে। পেঁয়াজের রস অকালে পাকা চুলকে কালো করতে সাহায্য করে।

9. পাঁচমিশালী টনিকঃ চুলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক জিনিস লাগিয়ে কালার করার পাশাপাশি পাঁচমিশালি টনিক বানিয়েও খেতে পারেন। যারা বাড়তি কোন ঝামেলা ছাড়াই চুল ঘন কালো করতে চান তাদের জন্য এই টনিকটি। ৫ টুকরা পাতিলেবু (খোসা ছাড়ানো অথবা খোসা সহ) ৫ কোয়া রসুন ১ কাপ মধু ১ কাপ তিসির তেল সব উপকরণ একসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন এবং মিশ্রণটি কাচের বয়ামে ভরে রাখুন। প্রতিদিন তিনবেলা খাওয়ার আগে ১ চা চামচ করে মিশ্রণটি খাবেন৷ নিয়ম করে ৩ মাস খেলে সব পাকা চুল হবে ন্যাচারালি কালো, সাথে ভালো হবে দৃষ্টিশক্তিও।

Check Also

খুশকির সমস্যা চিরতরে দূর হবে এই ঘরোয়া টোটকায়

খুশকির সমস্যা চিরতরে দূর হবে এই ঘরোয়া টোটকায়

শীতকালে অনেকের চুলেই খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। খুশকি কেবল চুলকে ময়লাই দেখায় না, চুলের বিভিন্ন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *