ব্যবসায় নিশ্চিত সফলতা পেতে এই নিয়মগুলি মেনে চলুন!
Image: google

ব্যবসায় নিশ্চিত সফলতা পেতে এই নিয়মগুলি মেনে চলুন!

বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যবসা করার চেয়ে চাকরি করা তুলনামূলক বেশ সহজ যদিও আবার চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন। World Bank প্রতি বছর একটি তালিকা করে, সেই তালিকার নাম “Ease of Doing Business”. এই তালিকায় মূলত কোন দেশ বেশী ব্যবসা বান্ধব
এবং কোন দেশে ব্যবসা শুরু করা সহজ

তা প্রকাশ করে। এই ease of doing business index ২০২২ এ দেশের অবস্থান ১৯০ দেশের মধ্যে ১৬৮তম। এর সহজ মানে, আমাদের দেশের তুলনার ১৬৭ দেশ এগিয়ে আছে, যেখানে ব্যবসা করা সহজ। তবে আশা করছি সামনের ২/৩ বছরের মধ্যে এই তালিকায় আরেকটু সামনে আগাতে পারব। আমাদের দেশে যে নতুন ব্যবসা শুরু হচ্ছে না তা কিন্তু নয়, প্রতিদিন নতুন নতুন উদ্যোক্তারা

ব্যবসার ধারনা নিয়ে আসলেও সফলতার হার খুবই সামান্য।আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনার সাথে ব্যবসায় সাফল্যের ১৮টি মূলনীতি তুলে ধরতে চাই যা হয়ত আপনাকে চিন্তার কিছু খোরাক দিতে পারে। আর কথা না বাড়িয়ে আসুন ব্যবসায় সাফল্যের ১৮টি মূলনীতি কি কি তা জানার চেষ্টা করি।

চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক-
১। ব্যবসা না গ্রাহকদের সমস্যার সমাধান করুন।অনেক আগে যখন ব্যবসায় প্রতিযোগিতা কম ছিল তখন যে যেই ধরনের ব্যবসা চাইত সেই ধরনের ব্যবসা শুরু করতে পারত এবং সফলও হত। বর্তমানে ব্যবসায় এত বেশী প্রতিযোগিতা বেড়েছে যে, আপনি চাইলেই সাধারন একটি ব্যবসা করে সফল হতে পারেন না। আপনাকে গ্রাহকদের সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে এবং ব্যবসার মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
২। সুযোগ সন্ধানের মধ্যে থাকুন। ব্যবসায় অনেক সময় অনেক ধরনের সুযোগ চলে আসতে পারে এবং আপনাকে সবসময় সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। ধরুন, এমন একটি সুযোগ চলে এসেছে যেখানে আপনার ধারনা কম, তারপরেও সেই সুযোগকে হ্যা বলুন এবং পরবর্তীতে তা শিখে নিন।

৩। রাতারাতি মুনাফা অর্জনের পিছনে ছুটবেন না। মানুষকে ঠকিয়ে খুব সহজেই কিছু টাকা অর্জন করা খুবই সহজ কিন্তু একজন প্রকৃত ব্যবসায়ী এই ভুল কখনই করবে না, কেননা এতে ঐ ব্যবসা ওখানেই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিভাবে ব্যবসার সুনাম বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। ব্যবসার সুনাম বাড়াতে পারলে মুনাফা খুব সহজেই হাতে চলে আসবে।
৪। গ্রাহকদেরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। বর্তমান এই আধুনিক ব্যবসায় গ্রাহকসেবা পন্যের গুনাগত মানের মত সমান গুরুত্ব বহন করে। আপনাকে মনে রাখতে হবে একজন সন্তুষ্ট গ্রাহক একটি বিলবোডের বিজ্ঞানের চেয়ে বেশী কার্যকার।
৫। লিখিত বিজনেস প্লানে গুরুত্ব দিন। মাথায় একটি ইউনিক বিজনেস আইডিয়া চলে আসলো আর ব্যবসাটি শুরু করে দিলেন, এর ফলে আপনি ঐ ব্যবসায় বিফল হতে পারেন। আপনার ব্যবসার জন্য একটি লিখিত বিজনেস প্লান করতে হবে, যেখানে ব্যবসাটি পরিচালিত হবে সেই প্লান অনুযায়ী।তাছাড়া একটি লিখিত বিজনেস প্লান থাকলে পরবর্তীতে সেই ব্যবসাটিকে বড় করতে কিংবা বিক্রি করতে সহজ হবে।

৬। কর্মীদেরকে নিজের পরিবারের সদস্য হিসাবে গ্রহন করুন। আপনার ব্যবসায় গ্রাহক যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি আপনার অধীনে থাকা কর্মীরাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার, কাজের প্রশংসা করা, কাজে সহযোগীতা করা আপনার দায়িত্ব।আপনাকে মনে রাখতে হবে, কোন কর্মী যদি আপনার ক্ষতি চায় তবে সেই ব্যবসাটিকে সফল করা সত্যিই কঠিন হয়ে যাবে।
৭। ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন। আপনার ব্যবসার জন্য আপনাকে অনেক বড় একটি লক্ষ্য ঠিক করতে হবে, কিন্তু সেই বড় লক্ষ্যটিকে বাস্তবায়ন করার জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন। এর ফলে আপনার ব্যবসার বড় লক্ষটি পূরণ করতে সহজ হবে। আপনি আগামী ৫ বছরের মধ্যে ব্যবসাটিকে কোথায় দেখতে চান তা ঠিক করুন। এবার ৫ বছরের লক্ষ্যকে ভেঙ্গে প্রতিমাসের লক্ষ্য ঠিক করুন। এর মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার কাক্ষিত বড় লক্ষ্যে যেতে পারবেন।
৮। ছোট সাফল্য সাদরে গ্রহন করুন। অনেকেই ব্যবসার ছোট ছোট সাফল্যকে গুরুত্ব দিতে চায় না, যা আসলে ঠিক না। ব্যবসায় প্রতিটি সাফল্য গুরুত্বপূর্ণ।যখন ছোট সাফল্য সাদরে গ্রহন করতে পারবেন পরবর্তীতে সেই ছোট সাফল্য বড় লক্ষ্যের পিছনে জ্বালানি হিসাবে কাজ করবে।ব্যবসায় ছোট সাফল্যে কর্মীদের পুরস্কৃত করুন এবং নিজেকেও পুরস্কৃত করুন।

৯। নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন।ব্যবসায় নেটওয়ার্কইং এর গুরুত্ব বলে শেষ করার মত। আপনি যেই শিল্পে ব্যবসা করছেন সেই শিল্পে অন্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। অপরিচিত মানুষদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন, যত সম্ভব তত বেশি মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলুন। এর ফলে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সুবিধাই পাবেন না, ব্যক্তিগত অনেক সুবিধাও পাবেন।
১০। সব সময় নিজেকে নতুন কিছু শেখার মধ্যে ব্যস্ত রাখুন।আধুনিক ব্যবসায় সবসময় নিজেকে একজন স্টুডেন্ট মনে করুন। আপনি কিছুই জানেন এই মনোভাব নিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় শেখার মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
১১। মার্কেটিং পরিকল্পনায় গুরুত্ব দিন। মার্কেটিং ছাড়া ব্যবসায় সফলতা অনেকটাই কঠিন। আপনার অনেক ভালো পণ্য বা সেবা থাকতেই পাবে কিন্তু সেই পণ্য বা সেবার কথা যদি গ্রাহক না জানে তবে কোনই লাভ নেই। মার্কেটিং মানেই অনেক টাকা খরচ করতেই হবে তা কিন্তু নয়, আপনার ব্যবহার, আপনার কর্মীদের ব্যবহার, মুখের ভাষাও একটি মার্কেটিং এর অংশ।
১২। সব টাকা একসাথে বিনিয়োগ করবেন না। ব্যবসা শুরু করা এবং ব্যবসা চালানো এক কথা না। অনেক সময় অনেক ব্যবসা শুরু করা সহজ তবে তা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া মোটেই সহজ কিছু না।এই কঠিন বিষয়কে সহজ করতে চাইলে আপনার হাতে যথেষ্ট টাকা থাকতে হবে। ব্যবসায় যেকোন সময়ে যেকোন কারনে টাকার দরকার পরে। এই দরকারী সময়ে সেই টাকা না থাকলে অনেক ভালো সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। তাই ব্যবসায় কখনই সব টাকা একসাথে বিনিয়োগ করবেন না।

১৩। নিজের সক্ষমতা থাকলে একাই ব্যবসা করুন। ব্যবসায় বিজনেস পার্টনার থাকা ভালো তবে অনেক সময় এই ভালোই আপনার জন্য কাল হয়ে উঠতে পারে।অনেক সময় বিজনেস পার্টনারের সাথে মতের মিল না হলে ব্যবসাটিকে সফল করা কঠিন হয়ে যায়। তাই নিজের সক্ষমতা থাকলে একাই ব্যবসা করুন।
১৪। প্রতিযোগীদেরকে শত্রু ভাববেন না ব্যবসায় প্রতিযোগীরা আপনার শত্রু না। প্রায় প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিযোগীদের থেকে কিছু না কিছু শেখা যায়। আপনার ব্যবসার প্রতিযোগীদেরকে খুঁজে বের করতে। তারা কি ধরনের সেবা তাদের গ্রাহকদেরকে দিচ্ছে তা জানতে হবে, একই সাথে তাদের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হবে এবং আপনাকে ব্যবসায় তাদের করা ভুলগুলোতে এড়িয়ে চলতে হবে।
১৫। ঝুঁকি নেওয়ার আগে এর গভীরতা নির্ণয় করতে হবে। ব্যবসায় ঝুঁকি নিতে হয় এর মানে এই না যে, না জেনে শুনে পানিতে লাফ দিবেন। ঝুঁকি নেওয়ার আগে কি পাবেন আর কি হারাবেন তার সঠিক ধারনা আপনার মধ্যে থাকা চাই। যদি পাওয়ার চেয়ে হারানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে তবে সেই অবস্থায় ঝুঁকি না নেওয়াই উত্তম।

১৬। লোন করার আগে ১০ বার ভাবুন। ব্যবসায় জন্য নিজের টাকা না থাকলে আমাদের মধ্যে অনেকেই টাকা লোন করার কথা চিন্তা করি। আসলে লোন করা কখনই ভালো কিছু না। তবে ব্যবসার দরকারে লোন করা প্রয়োজন হতে পারে। এই অবস্থায় সেই লোনের টাকা পরিশোধ করার মত সক্ষমতা আপনার আছে কিনা তা জানতে হবে।
১৭। ব্যবসার নামকরনে গুরুত্ব দিন। যেকোন ব্যবসায় ঐ ব্যবসার নামটি যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। যখন কেউ আপনার ব্যবসার প্রশংসা করবে তখন ঐ নাম ধরেই করবে।মানুষ আপনার নাম না জানলেও আপনার ব্যবসার নাম কি তা জানবে। ব্যবসার সুন্দর নাম ব্যবসাটি সফল করতে সাহায্য করতে পারে। নিজের নামে ব্যবসার নামকরন না করে, উচ্চারনে সহজ, ছোট, ইউনিক নাম খুঁজতে হবে। ১৮। পজিটিভ ব্যক্তিদের সাথে নিজেকে ঘিরে রাখুন। ব্যবসায় উত্তান-পতন ছিল, আছে এবং সামনেও থাকবে। আপনার আশে পাশে যারা রয়েছে তাদের কাছ থেকে বিপদের সময় কি ধরনের সাহায্য আশা করেন তার ধারনা থাকতে হবে। পজিটিভ ব্যক্তিদের সাথে নিজেকে ঘিরে রাখতে পারলে তারা আপনাকে নানা ভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারবে।

Check Also

মাত্র ২০০০ টাকায় মেশিন কিনে শুরু করুন এই দারুন লাভের ব্যবসা

মাত্র ২০০০ টাকায় মেশিন কিনে শুরু করুন এই দারুন লাভের ব্যবসা

যে কোন চাকরির থেকে ব্যবসা করে কিন্তু অনেকটাই বেশি উপার্জন করা যাচ্ছে।এমতাবস্থায় আজকের এই বিশেষ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *