জীবনের একটা পর্যায়ে এসে প্রায় প্রতিটি মানুষকেই যে বিষয়টিতে অনুতাপ ক’রতে হয় সেটা হচ্ছে নিজে’র অর্থনৈতিক অবস্থা। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে আফসোসের মাত্রা হয় অনেকটাই বেশী। কখনো নিজে’র অতিরি’ক্ত শখ- আহ্লাদের খেসারত দিতে গিয়ে, কখনো অদক্ষ’তা
আর অমনযোগীতার কারণে জীবনের মাঝপথে গিয়ে অনেকটাই অ’সহায় অব’স্থায় পড়তে হয় তাদেরকে এ দিক দিয়ে। স’ম্প্রতি ন্যশনাল ফাউন্ডেশন ফর ক্রেডিট কাউন্সিলিং বা এনএফসিসি প্রায় ২,২০০ মানুষের ওপর এ ব্যাপারে একটি জরিপ পরিচালনা করেন এবং খুঁজে পান যে ৫টি অর্থনৈতিক সি’দ্ধান্তকেই নিজেদের অর্থনৈতিক পরিতাপের প্রধান কারণ বলে মনে করেন। আর সেগুলো হচ্ছে- কী করে রেহাই পাওয়া
যাবে এই পাঁচটি প্রধান অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে? আসুন জে’নে নিই অর্থনৈতিক ভাবে সুরক্ষিত থাকতে কোন অভ্যাসগুলো ত্যা’গ করা জরুরী।
১. অভ্যাসবশঃত অতিরি’ক্ত খরচ কখনো আবেগের বশে, ব’ন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে, নিজেকে বড়লোক প্রমাণ ক’রতে গিয়ে, মন ভালো ক’রতে, টাকা হাতে পাওয়ার আনন্দে কিংবা কমদামে কেনার সুযোগ পেয়ে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও অনেক বেশি খরচ করে ফে’লেন অনেকে। তবে এটাকে অভ্যাস না করে ফে’লে থামিয়ে দেওয়ার বেশ কয়েকটি উপায় আছে। আর সেগুলো হল- আবেগের বশে কিংবা মন ভালো ক’রতে গিয়ে জিনিস কিনতে যাওয়ার আগে একবার ভাবুন ঠিক কী কারণে খরচ করছেন আপনি। নিজে’র স’মস্যাটা বোঝার চেষ্টা
করুন। কোন কারণটি আপনাকে ঠেলে দিচ্ছে অতিরি’ক্ত খরচের দিকে। মন খা’রাপ? স’ম্পর্কের টানাপোড়ন? স’মস্যার সমাধান করুন। খরচ করে খানিক ভালোলা’গা অর্জন থেকে বিরত থাকুন। বের করার চেষ্টা করুন কোন কাজ আপনাকে টাকা খরচের সমান আনন্দ দিচ্ছে। হাতে ক্যাশ টাকা রাখু’ন। ক্রেডিট কার্ড সাথে না রাখার চেষ্টা করুন। হিসেব করে মাসের প্রথমেই পুরো মাসের টাকা নিয়ে ফেলুন ক্যাশে। তারপর সেখানে যত স’মস্যাই হোক, ক্রেডিট কার্ডে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ব’ন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময়েও হিসেব করে ঠিক কতোটা
টাকা লাগতে পারে ভাবুন আর সেটাই নিয়ে যান। এতে করে অতিরি’ক্ত খরচ ক’রতে পারবেন না আপনি। আর যখনই কিছু কম দামে পেয়ে যাবেন এমন কারো সাথে পরাম’র্শ করে নিন যে অনেক বেশি স্থির মস্তিষ্কের। এতে করে আপনি বুঝতে পারবেন কোনটা আপনার কেনা উচিত আর কোনটা নয়।
২. অপর্যাপ্ত সঞ্চয় টাকা যে মানুষ জমায় না তা নয়। তবে অল্প দরকারেই সেটা খরচ হয়ে যায়। এই যেমন সপ্তাহের পার্টি কিংবা ব’ন্ধুদের আড্ডা, অথবা নতুন কোনো পোশাক। আর এর থেকে দূ’রে থাকতেই সঞ্চয় করুন দীর্ঘমেয়াদী প’রিকল্পনায়। নিজে’র মনকে বোঝান যে এটা খুব বেশি দরকারের সময় কাজে লাগবে। একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নিন। তার ভেতরে যত স’মস্যাই হোক সঞ্চয়ের দিকে তাকানো থেকে বিরত
থাকুন। কত জমা হল সেটা গুনুন। কিন্তু সেটা সঞ্চয় করার বাঁ’ধা সময় পার হওয়ার পরেই।
৩. বাড়ি না কেনা বাড়ি কেনা কিংবা না কেনা নির্ভর করে একজন মানুষের প’রিস্থিতির ওপর। কারো হয়তো পরিবার নেই, টাকা নেই কিংবা পছন্দের জায়গা নেই। আর তাই বাড়িটাও কেনা হচ্ছে না। কিন্তু পরবর্তীতে এ নিয়ে অনুতাপ করার চাইতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজুন। যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তাহলে কিনেই ফেলুন বাড়ি। ক. বাড়ির ডাউন পেমেন্ট করা ছাড়াও অবসর জীবন আর জরুরী সময়ের জন্যে যথেষ্ট সঞ্চয়
আপনার আছে তো?খ.বাড়িটিতে কমপক্ষে পাঁচ বছর থাকছেন তো আপনি?গ. যেখানটায় বাড়ি করছেন সেখানকার বাড়ি ভাড়া করা বাড়ি কেনার চাইতে লাভজনক কি?
৪. বাড়ি কেনাঅনেকেই ঝোঁকের বশে বাড়ি কিনে ফে’লে পরবর্তীতে নানারকম ঝামেলায় প’ড়েন। টাকা ঠিকমতন প’রিশোধ না ক’রতে পারায় কিংবা আরো ভালো আর মনের মতন বাড়ির দেখা পাওয়ায় পরবর্তী জীবনে অনুতাপ করেন তারা। সেক্ষেত্রেও উপরের তিনটি প্রশ্নের জবাব আর সেই সাথে নিজে’র পছন্দকে ঠিকভাবে বুঝতে পারা- এ দুটোর মিল করে ফেলুন।
৫. অবসরের জন্যে যথেষ্ট সঞ্চয় না করা একজন মানুষের অবসরের জন্যে তার বেতনের মোট ২০ শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত। আর সেটা না
করলে অনেক সময়েই মাঝপথে গিয়ে হ’তাশ হয়ে প’ড়েন অনেকে। টনক নড়ে তাদের। আর তাই উপার্জনের শুরু থেকেই ঠিকঠাক অংশটা সঞ্চয়ের তালিকায় রাখু’ন। ব্যাংকে নানারকম অবসরের জন্যে সঞ্চয় করবার পদ্ধতি আছে। সেগুলোও অনুসরণ ক’রতে পারেন।
ডিসক্লেইমার: প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেজ্ঞের পরামর্শ নিন।