সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে অভিভাবকেরা সাধারণত যেসব ভুল করে থাকেন!
Image: google

সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে অভিভাবকেরা সাধারণত যেসব ভুল করে থাকেন!

বাচ্চারা নানান ধরণের ভুল তো করে থাকেই। তবে অভিভাবকরাও সাধারণ কিছু ভুল করে বসেন। যা বাচ্চাদের জন্যই ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। তাই অভিভাবকদেরও উচিত নিজের ভুল-ত্রুটি বুঝে তা সংশোধন করা। 1. বাচ্চাদের নষ্ট করা- সমস্ত অভিভাবকই ভালোবেসে,

আদর-যত্নে নিজের সন্তানের লালন-পালন করেন। তাদের সমস্ত শখ, আহ্লাদ ও চাহিদা পূরণ করেন। তবে অনেক সময় মা-বাবার এই ভালোবাসারই অনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করে বাচ্চারা। আবার নিজের ভাই বা বোনের আগমনের কথা জানতে পারলে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে। এই নিরাপত্তীহীনতাই পরবর্তীকালে হিংসা ও দ্বেষে পরিণত হয়। অনেক সময় বাচ্চারা অবাসাদগ্রস্ত

হয়ে পড়ে। নিজের অস্তিত্বের সংকটে ভুগতে থাকে। 2. প্রয়োজনাতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদান- বাচ্চাদের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা প্রদান করলে তাঁদের আত্মবিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন সময় তাঁদের সামনে কোনও আত্মবিশ্বাসী বাচ্চা এলে তাঁরা তাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন এবং তাঁদের মধ্যে হীনমন্যতার ভাব জন্মায়। 3. অন্য বাচ্চার সঙ্গে তুলনা- প্রতি যোগিতার যুগে অধিকাংশ অভিভাবকই অন্য বাচ্চার সঙ্গে নিজের সন্তানের তুলনা করে থাকেন। এর ফলেও বাচ্চাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভব ও ঈর্ষা জন্ম নেয়। আবার তাঁদের

মধ্যে আত্মবিশ্বাসও কমতে থাকে। এ সমস্ত কারণে বাচ্চারা সমস্যায় পড়তে পারে। মনে রাখবেন, তুলনা করার ফলে শুধু তাদের মনে হিংসাই জন্ম নেবে না, বরং আত্মবিশ্বাসেরও অভাব দেখা দেবে। 4. প্রথম সন্তানের তুলনায় কনিষ্ঠ সন্তানের ওপর অধিক নজর দেওয়া অধিকাংশ অভিভাবককেই এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। প্রথম সন্তান বড় হয়ে গেলে, কনিষ্ঠ সন্তানের প্রতি অধিক যত্নবান হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। এটা স্বাভাবিক ঘটনা হলেও, শিশুমন তা বোঝে না। নিজের ভালোবাসা ভাগ হতে দেখে বাচ্চারা খিটখিটে মেজাজের

হয়ে পড়ে। নিজের ছোট ভাই বা বোনের জন্য তাদের মনে ঘৃণা ও ঈর্ষা জন্মায়। 5. বাচ্চাকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণে রাখা বাচ্চাদের অনুশাসনের মধ্যে রাখার জন্য কিছু অভিভাবক তাদের ওপর প্রয়োজনাতিরিক্ত বাধানিষেধ আরোপ করেন। বাচ্চাদের সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। জোর করে নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দেওয়া, সব সময় স্ট্রিক্ট ব্যবহার করার ফলে তাদের মনের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। পাশাপাশি তাদের আত্মবিশ্বাসও কমে যায়।

কোন বিষয়গুলি নজরে রাখবেন-
১. নিজের সন্তানকে ভালোবেসে বড় করতে কোনও বাধা নেই। সন্তানের পছন্দের জিনিস এনে দেওয়া বা তাদের কথা শোনার ক্ষেত্রেও কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। কিন্তু তাদের চাহিদার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, তা তাদের বোঝান। ছেলে বা মেয়ে একবার কিছু চাইল এবং সঙ্গে সঙ্গে তা হাজির করে দিলেন, তা করবেন না। এমন করলে তারা টাকার গুরুত্ব বুঝবে না। আবার অপেক্ষা করতেও শিখবে না।

কারণ তাদের মনে বসে যাবে যে, সঙ্গে সঙ্গে কিছু চাইলে তা পেয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু কখনও এর অন্যথা হলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। পরবর্তী কালে আপনার সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করতে পারে।
২. অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদানও তাদের ক্ষতি করতে পারে। জীবনের কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার সময় অভিভাবকরা সবসময় ঢাল হয়ে দাঁড়ালে, বাচ্চারা সংঘর্ষের শক্তিই সঞ্চার করতে পারবে না। অল্প বয়স থেকেই দুর্বল হতে শুরু করবে তারা। তাই কোনও কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য বাচ্চাকে স্বাধীন ছেড়ে দিন। সামনে থেকে নিরাপত্তা প্রদানের পরিবর্তে, পিছনে দাঁড়িয়ে তাদের সমর্থন

জোগান। ভরসা দিন, কিছু হলে আপনি আছেন, কিন্তু সেই পথটি ওকে একাই অতিক্রম করতে হবে।
৩. কনিষ্ঠ সন্তানের দেখাশোনায় অধিক সময় ব্যয় হয়। সেই সময়টি তখন নিজের মায়ের কাছ থেকে বড় ছেলে বা মেয়ে পায় না। তাই যতটা সম্ভব বড় ছেলে বা মেয়েকেও সময় দিন। বড় সন্তানকেও ছোট ভাই বা বোনের দায়িত্ব পালন করতে দিন। ছোটখাটো কাজ করা যেমন- পাওডার লাগানো, গা-হাত পা মুছিয়ে দেওয়া, কিছু জিনিস হাতে হাতে এগিয়ে দিতে বলুন নিজের বড় ছেলে বা মেয়েকে। এর

ফলে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা জন্ম নেবে। এমনকি বড় দাদা বা দিদি হওয়ার দায়িত্ব বুঝতে পারবে তারা।
৪. অত্যধিক নিয়ন্ত্রণের ফলে হীতে বিপরীত হতে পারে। সাধারণ বা ছোটখাটো বিষয় সন্তানকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। এমনকি ভালো সিদ্ধান্তের জন্য তাঁদের প্রশংসা জানান। যেমন- নিজের জামাকাপড় তাদেরই পছন্দ করতে দিন। আবার তারা নাচ বা গান শেখার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তা পুরো করুন। এর ফলে তারা সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পাবে না। আবার ঠিক বা ভুল বিচার করতে শিখবে।

Check Also

সন্তান সব সময়ে মুখে মুখে তর্ক করলে আপনি যা করবেন!

সন্তান সব সময়ে মুখে মুখে তর্ক করলে আপনি যা করবেন!

পরিবারের ছোট সদস্যরা মাঝে মধ্যেই ভুল করে। তা সে জেনে হোক কিংবা না যে। এই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *