৬টি সাধারণ লক্ষণই বলে দেবে আপনি পুরোপুরি সুস্থ নেই!
Image: google

৬টি সাধারণ লক্ষণই বলে দেবে আপনি পুরোপুরি সুস্থ নেই! আজই মিলিয়ে দেখুন..

একটু কাজ করেই কি হাঁপিয়ে উঠছেন? ধড়ফড় করছে বুক? হারিয়ে যাচ্ছে কথার খেই? এমন কিছু লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে শারীরিকভাবে আপনি ‘অসুস্থ’! অনেকেই মনে করেন, সুস্থ থাকা মানেই হালকা-পাতলা হওয়া। আসলে কিন্তু তা নয়। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা মানেই ফিট থাকা। শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকলে শুধু ক্লান্তই লাগবে না,

দেখা দেবে আরও নানান জটিলতা। তাই এমন কিছু লক্ষণ দেখা দিলে সচেতন হোন এখনই; তবেই এড়িয়ে যেতে পারবেন যাবতীয় জটিলতা। চলুন, দেখে নেওয়া যাক অসুস্থ থাকার কারণগুলো। ১. দ্রুতই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া অল্প কাজ করছেন, কিন্তু শরীরের ক্লান্তিতে মনে হচ্ছে যেন মাটি কেটে এলেন। দিনভর এক অদ্ভুত ক্লান্তি আর অবসাদ। এই অবসাদ, ক্লান্তির কারণ কী? এমন লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন শারীরিকভাবে

মোটেও ফিট নেই আপনি। রাতে ভালো ঘুম না হলে দিনের বেলা একটা ক্লান্তি ভর করে। রাতে মোটামুটি সাত থেকে আট ঘণ্টার একটা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম দরকার। খেয়াল করুন, তা হচ্ছে কি না। থাইরয়েড হরমোনের অভাবজনিত রোগে অবসাদগ্রস্ত লাগতে পারে। অ্যানার্জি লেভেল কমে যেতে পারে। খেয়াল করুন, হঠাৎ ওজন বেড়ে যাচ্ছে কি না। মাসিকে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, চুল ও ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি থাকতে পারে

এ রোগে। ২. শ্বাস-প্রশ্বাসে অস্বাভাবিকতা সুস্থ থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক শ্বাসপ্রশ্বাস। বেশির ভাগ মানুষই হালকাভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেন যা তাঁদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। গভীরভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে শেখা আপনার স্বাস্থ্যের দারুণ উন্নতি ঘটাতে পারে। শরীর আনফিট হলে স্বাভাবিকের চেয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস অনেক দ্রুত হবে। হাঁপানি রোগীদের মতো ঘনঘন শ্বাস নেওয়ার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে। ৩. কথায় অমনোযোগী কেউ যখন কথা বলবে, তখন সেখানে একটানা মনোযোগ ধরে রাখা কষ্ট হবে। এদিকে নিজে যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন,

দেখবেন দ্রুতই পাল্টে ফেলছেন সেই কথার বিষয়। এটাও আনফিট শরীরের অন্যতম লক্ষ্মণ। মনোবিজ্ঞান পরামর্শক রালফ ইভান্স বলেন, আমাদের পরিবারে বা কর্মক্ষেত্রে অনেকেই সব সময় চিৎকার-চেঁচামেচি করেন; তাঁদের সামনে তটস্থ থাকেন পরিবারের সদস্য বা কর্মীরা। এ অবস্থাটি তাঁদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণায় এই মনোবিজ্ঞানী জানিয়েছেন, এতে তাদের মনোবল ভেঙে যায়। তাদের মনে একটি বিদ্রোহী ভাবের সৃষ্টি হয়। মনে মনে খারাপ আচরণকারীদের

চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে পাল্টা যুক্তি সাজাতে থাকেন। এর ফলে হাতে থাকা কাজটি নিয়ে তিনি অমনোযোগী হয়ে পড়েন। ৪. স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া ছোটবেলার কথাও আপনার মনে আছে। ফলে আপনার স্মৃতিশক্তির সুনাম আছে কাছের মানুষদের মধ্যে। কিন্তু হঠাৎ করেই খেয়াল করলেন, কদিন ধরেই গতকাল কী ঘটেছে বা সকালে পত্রিকায় কী পড়লেন তার কিছুই মনে করতে পারছেন না! একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন মস্তিষ্কের কোষে জমা হয়ে ক্ষতি সাধন করে এবং স্মৃতি নষ্ট করে ফেলে। এসবের মূলে রয়েছে নন-এনজাইমেটিক গ্লাইকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে

অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন অ্যান্ড প্রডাক্ট জমা হওয়া। এগুলো নিউরন এবং সেগুলোর আন্তসংযোগ নষ্ট করে দেয়। গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলে ধীরগতিতে এবং বেশি থাকলে দ্রুতগতিতে এসব পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ৫. কিছুই ভালো লাগে না আপনি হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে আছেন। বন্ধুদের মধ্য থেকে একজন আপনাকে নিয়ে মজার কিছু বলছেন, সেখানেও মেজাজ বিগড়ে গেল আপনার। অন্যরা যেখানে ঠাট্টা করছেন, আপনি সেখানে সহজেই রেগে উঠছেন। কেন এমন? এ বিষয়ে কথা হয় কাউন্সেলর মরিয়ম সুলতানার সঙ্গে। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা মেডিকেল

এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে অ্যাকশন ফর ডেভেলপমেন্টের কাউন্সেলর তিনি। মরিয়ম সুলতানা বলেন, ‘অতিরিক্ত কাজের চাপ, একঘেয়েমি বোধ, একাকিত্ব কিংবা প্রতিকূল পরিবেশ মানুষকে এমন সমস্যার দিকে ঠেলে দেয়। আর এ সমস্যা বেশি দেখা দেয় কৈশোর ও মধ্যবয়সে।’ এর থেকে পরিত্রাণের উপায়টি কিন্তু তেমন কঠিন কিছু নয়। বারবার যে বিষয়ের ওপর তিনি জোর দিয়েছেন তা হলো, সব সময় হাসিখুশি থাকা। একাকিত্ব এড়িয়ে চলতে হবে। তিনি বলেন, ‘সব সময় চেষ্টা করুন কারও

সঙ্গে মিশতে। হয়তো প্রথমে তাঁকে ভালো লাগবে না, কিন্তু একটা সময় পর দেখবেন যে নতুন বন্ধুটিকে আপনার ভালো লাগতে শুরু করেছে। সবচেয়ে উপকার হবে আপনার মনের। ৬. ঘুমের সমস্যা অনেক সময় সারা রাত ঘুমিয়ে সকালে জাগার পর মনে হয়, যেন ঘুমটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। সারা দিন বারবার ঘুম আসতে থাকে। কাজে ব্যাঘাত ঘটে। হাই তুলতে থাকেন। অথচ ঘুমের যে খুব সমস্যা হচ্ছে তা নয়। তাহলে এই যন্ত্রণা কেন? সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমালেই আমাদের চলে যায়। ঘুমের একটা ছন্দ বা চক্র আছে। ছন্দপতনের

কারণে অনেক সময় ঘুম বিঘ্নিত হয়েছে বলে মনে হয়। তখন সারা রাত ঘুমিয়েও মনে হয় যে ঘুম হয়নি। বিষণ্নতা বা মানসিক সমস্যার কারণেও ঘুম বিঘ্নিত হয়। দেখা যায়, ঘুমিয়ে পড়ার পর ঘুম সম্পূর্ণ না হতেই তা ভেঙে যাচ্ছে। সেই ঘুম আর জোড়া লাগছে না। ভালো নিরবচ্ছিন্ন ঘুম পেতে স্লিপ হাইজিন মেনে চলুন। যেমন ঘড়ি ধরে প্রতিদিন একই সময় ঘুমানো ও জেগে ওঠা, বিছানাকে কেবল ঘুমের জন্যই ব্যবহার করা বা ঘুমের আগে টিভি, কম্পিউটার, ফেসবুক ব্যবহার না করা ইত্যাদি অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমানোর দু-তিন ঘণ্টা আগে রাতের

খাবার সেরে ফেলুন। ধূমপান নিষেধ। বিকেলের পর কোনো চা কফি নয়। ঘুমানোর আগে কোনো শক্ত ব্যায়ামও নয়। ঘুমানোর আগে গরম দুধ, হালকা সংগীত বা বই এবং একটি উষ্ণ গোসল ভালো ঘুম এনে দেবে। এ সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হলে আপনার শরীর মহাশয়কে নিয়ে ভাবুন। কেবল ভাবলেই তো হবে না; যথাযথ যত্ন নিন। যত্ন বলতে পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত বিশ্রাম, মানসিক প্রশান্তির দিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Check Also

তরুণদের মাঝে হৃদরোগ বাড়ছে যে কারণে

তরুণদের মাঝে হৃদরোগ বাড়ছে যে কারণে

তরুণদের মধ্যে বেড়ে চলেছে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *