কালবৈশাখী ঝড়ের সময় নিরাপদে থাকার সহজ উপায়

গ্রীষ্ম কাল চলে এসেছে এরই মধ্যে কিনা জানা গেছে বৈশাখী ঝড় তাণ্ডব লীলা চালাবে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, প্রবল বৃষ্টি ও বজ্রপাত সঙ্গে নিয়ে ঘণ্টায় ৫০ কি.মি. বেগে ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আবহাওয়া অফিস এমনই ইঙ্গিত

দিয়েছে। কালবৈশাখীর আদ্যোপান্ত – কালবৈশাখীর পর্যায়গুলো হচ্ছে- ১) কিউমুলাস বা ঘনীপূঞ্জীভবন পর্যায়, ২) পূর্ণতা পর্যায় এবং ৩) বিচ্ছুরণ পর্যায়। ‘কাল’ শব্দটির অর্থ ধ্বংস এবং মূলত বৈশাখ মাসে উৎপত্তি হয় বলে একে কালবৈশাখী নামে অভিহিত করা হয়। কালবৈশাখী বায়ুপুঞ্জ বজ্রঝড় বা পরিচলনগত বজ্রঝড় নামেও বিবেচিত। মূলত পশ্চিমবঙ্গসহ বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, আসামের

অঞ্চলবিশেষ ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল কালবৈশাখী দ্বারা প্রভাবিত হয়। অনেকসময় এই ঝড় জীবনঘাতী রূপ ধারণ করে। গ্রীষ্ম ঋতুর সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এ ঝড়ের আগমন ঘটে। কালবৈশাখীর বায়ুর গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কি.মি.। আবার কোনো সময় এ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কি.মি.এর বেশিও হতে পারে। কালবৈশাখী কেন হয়? এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, সাধারণত তিন

ধরনের বাতাস একীভূত হয়ে কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়। সাগরের আর্দ্র বাতাসের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত পূবালী বাতাস এবং স্থলভাগের বাতাস একসঙ্গে হলে তা বজ্রমেঘের সৃষ্টি করে। পরে তা চাপ আকারে নিচে নেমে আসে এবং প্রচণ্ড ঝড়ের সৃষ্টি হয়। এবার তবে জেনে নিন কালবৈশাখীর প্রচণ্ড এলোমেলো ঝড় হলে কী করবেন? প্রচণ্ড ঝড়ে তছনছ হয়ে যেতে পারে জনজীবন। কালবৈশাখী আসলেই নানা জায়গা থেকে খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন দুর্ঘটনার। আপনিও যাতে ঝড়ের প্রভাবে দুর্ঘটনায় না পড়েন,

তাই জেনে নিন প্রচণ্ড ঝড়ে কীভাবে বাঁচবেন-
১। ড্যাম্প বা অন্য কোনো কারণে যদি বাড়িতে কোথাও কোনো ফাটল ধরে থাকে, তাহলে অবশ্যই এখনই সারিয়ে ফেলুন। ২। জানালা-দরজার লক ঠিক আছে কিনা দেখে নিন। ৩। হ্যারিকেনে সবসময় কেরোসিন তেল ভরে হাতের কাছে রাখুন। এছাড়া, মোমবাতি কিংবা ব্যাটারি চালিত কোনো আলো সবসময় হাতের কাছে রাখুন। যাতে লোডশেডিং হলে অন্ধকারে অসুবিধা না হয়। ৪। ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে

শুকনো খাবার, পানি, ওষুধ হাতের কাছে রাখবেন। ৫। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ওয়াটারপ্রুভ ফাইলে ভরে রাখুন। ৬। মোবাইলে সবসময় পুরো চার্জ দিয়ে রাখুন। ৭। ঝড়-বৃষ্টির সময়ে ঘরের বাইরে বেরোবেন না। বাচ্চাদের সবসময় নজরে রাখুন। যাতে তারা কোনোভাবেই ঘরের বাইরে যেতে না পারে। ৮। ঝড়ের সময়ে বাড়ির ইলেক্ট্রিক কানেকশন বন্ধ করে দিন। মেন সুইচ বন্ধ রাখুন।

বজ্রপাত থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার কিছু টিপস –
১. উঁচু জায়গায় বা খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। ২. খোলা জায়গায় থাকলে ছাতা ব্যবহার করবেন না। ৩. গাছের নীচে আশ্রয় না নেয়াই ভালো। ৪. বাইরে হাঁটার সময় বজ্রপাত দেখা দিলে দ্রুত মাটিতে বসে পড়ুন। ৫. বাড়িতে আশ্রয় নিন। তবে ঘরের বাইরে উঁচু এন্টেনা থাকলে তা টিভি থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মাটির সংস্পর্শে রাখতে হবে। এছাড়া খোলা মাঠে আশেপাশে উঁচু বৃক্ষবিহীন এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করলে সেটিও বজ্রপাতে আক্রান্ত হতে পারে। ভবনের উপরে একটি খুঁটির সঙ্গে লোহার তার স্থাপন করে তা মাটির

সাথে সংযুক্ত করে দিলে উঁচু ভবনও বজ্রপাত থেকে রক্ষা পায়। এ পদ্ধতিতে টিভিও চালু রাখা যায়। ৬. আপনার বাসার বিদ্যুৎ নিরোধক যন্ত্রের কার্যকারিতা যাঁচাই করুন (যদি থাকে)। পূর্ব প্রস্তুতি নিন এবং নিরাপদ থাকুন। ৭. বাসা থেকে বের হবার পূর্বে কম্পিউটার, টিভি ও অন্যান্য বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতির, সম্ভব হলে, বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। ৮. পরিবারের সকলের মধ্যে বজ্রপাতের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা জাগ্রত করুন এবং বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক ও যোগাযোগ তার সমূহ (টিভির এন্টেনা, ডিসের এ্যান্টেনা, টেলিফোনের তার ইত্যাদি) বিচ্ছিন্ন রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ৯. বিদ্যুৎ চমকানোর কারণে ভোল্টেজ প্রচণ্ড গতিতে উঠা-নামা করে। এ

ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য বাসার টেলিফোন সেট, কর্ডলেস ফোন, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারনেট লাইন ইত্যাদির সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখুন। ১০. সম্ভব হলে মেইন পাওয়ার সুইচ বন্ধ করুন। কারণ প্রচণ্ড বজ্রপাতে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ১১. কার বা জীপে আরোহণরত থাকলে গাড়ীর দরজা ও জানালা বন্ধ রাখুন। এটি সরাসরি বিদ্যুৎ স্পৃষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা কমাবে এবং তীব্র শব্দের সরাসরি আঘাত হতে আপনাকে রক্ষা করবে। ১২. মোটরসাইকেল, সাইকেল চালকরা বাইক/সাইকেল থেকে নেমে পড়ুন এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজুন। ১৩. বড় গাছের নিচে কখনো অবস্থান করবেন না কারণ গাছ বিদ্যুৎ সুপরিবাহী ও বিদ্যুৎ আকর্ষণী।

১৪. ঝড়ের সময় গ্যাসোলিন জাতীয় দাহ্য পদার্থ ব্যবহার পরিহার করুন।১৫. শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হোন। কারণ বজ্রপাতের বিকট শব্দে তারা ভীত হতে পারে। বজ্রমেঘ দেখা মাত্র শিশুদের খেলার মাঠ থেকে ডেকে নিন। ১৬. ঘরের সব দরজা জানালা বিশেষ করে কাঁচের জানালা বন্ধ রাখুন এবং লোহার রড, গ্রীল স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। ১৭. বিদ্যুৎ চমকানোর সময় স্টিলের হাতলের পরিবর্তে কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা বেশী নিরাপদ। ১৮. বজ্রমেঘ দেখে, চিনতে শিখুন। নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। নিজের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করুন। ১৯. পুকুর, খাল, নদী বা এ জাতীয় জলাশয়ে অবস্থান করবেন না। কারণ এসব জলাশয়ে বজ্রপাত হলে পুরো

জলাশয়টি উচ্চ ভোল্টেজ এ পরিণত হবে। আপনি যদি উম্মুক্ত স্থানে নৌকায় অবস্থান করেন তবে যত দ্রুত সম্ভব ভূমিতে নামার চেষ্টা করুন। ২০. তীব্র বজ্রপাতের সময় কেউ ঘরের বাহিরে যাবেন না। আপনি যদি খোলা জায়গায় থাকেন তবে দ্রুত নিকটতম যে কোনো ঘরে ঢুকে পড়ুন। একান্তই সুযোগ না থাকলে বুকে হাত রেখে মাথা নিচু করে মাটিতে বসে পড়ুন।

About Susmita Roy

Check Also

এবার ওড়িশায় মিলল বিপুল পরিমাণে সোনার ভাণ্ডার!

এবার ওড়িশায় মিলল বিপুল পরিমাণে সোনার ভাণ্ডার!

ইতিমধ্যেই দেশের জম্মু ও কাশ্মীরে বিপুলহারে লিথিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে, এবার আরও একটি বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *