আজকালকার বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সচেতন হলেও অনেক বিষয় নিয়েই তারা ভাল-মন্দের মধ্যে ফারাক করতে পারেন না। যেমন ধরুন একদল তাদের বাচ্চাদের জন্ম নেওয়ার কয়েক মাস পর থেকেই গরুর দুধ খাওয়াতে শুরু করে দেন। কিন্তু এত কম
বয়সে বাচ্চাকে গরুর দুধ খাওয়ানো ঠিক কি? এই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হল এই প্রবন্ধে। বাচ্চার বয়স অন্তত ১২ মাস হওয়া পর্যন্ত গরুর দুধ দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত কেন? গরুর দুধ এক বছরের কম বয়সী শিশুদের মোটেও দেয়া উচিত নয়। এটা এমন একটি খাদ্য যাতে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এতে সোডিয়াম থাকে মায়ের দুধের চার গুণ, পটাশিয়াম তিন গুণ, ফসফরাস ছয় গুণেরও
বেশি। এক বছরের কম বয়সী শিশুদের কিডনি এমনিতেই অপরিণত থাকে, এই অতিরিক্ত মাত্রার খনিজ নিষ্কাশনে কিডনি বহু সমস্যার সম্মুখীন হয়। দুধে প্রোটিনের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি থাকে বলে প্রোটিন হজম ও বিপাক করতেও এক বছরের কম বয়সী শিশুর মারাত্মক অসুবিধা হয়। গরুর দুধে ল্যাক্টোজ সুগার ও কেসিন প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। এই বিপুল পরিমাণ ল্যাক্টোজ ও বৃহদাকার কেসিন প্রোটিন
হজমের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাক্টেজ ও কাইমোসিন এনজাইম বাচ্চাদের থাকেনা সাধারণত। একই কারণে অনেক সময় এমনকি মায়ের দুধ ও ফর্মুলা দুধের ল্যাক্টোজই বাচ্চারা প্রথমদিকে ঠিকভাবে হজম করতে পারেনা। অনেক বাচ্চারই ল্যাক্টোজ সেন্সিটিভিটি থাকে। গরুর দুধে প্রয়োজনমত লৌহ (আয়রন) থাকেনা। তাই রক্তসল্পতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যেহেতু প্রথম বছর শিশুর আয়রনের চাহিদা অনেক বেশি থাকে।
গরুর দুধে এমন কিছু জীবাণু থাকতে পারে, যা প্রতিরোধের মত ক্ষমতা একদম ছোট বাচ্চাদের থাকেনা। এর ফলে ডায়রিয়া, অন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ, কান পাকা ও পরবর্তীতে বোভাইন টিউবারকিউলোসিস সহ আরো প্রভূত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এছাড়াও গরুর দুধের প্রোটিন এর জটিল কাঠামোর কারণে তা অনেক ক্ষেত্রে কম বয়সে ডায়াবেটিস এর মত জটিল রোগেরও কারণ হতে পারে। গরুর দুধে অতিরিক্ত
প্রোটিন ও খনিজ পদার্থের কারণে এ দুধের উপর নির্ভরশীল শিশুদের মূত্র তুলনামূলক বেশী ঘন হয়ে থাকে যা অসমোটিক ডাইইউরোসিসের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি প্রস্রাব আকারে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি করে। তাছাড়া রক্তে অতিরিক্ত প্রোটিন প্রবেশ করায় রক্ত কিছুটা গাঢ় হয় যা শরীরে আপাত পানির ঘাটতি তৈরি করে। তাই গরুর দুধের উপর নির্ভরশীল শিশুরা এমনিতেই মৃদু আকারের পানিশূন্যতায়
ভুগে থাকে। এসব শিশু জ্বর ও ডায়রিয়ার সময় অতি দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে যা তার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। সব দিক বিবেচনা করে তাই ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের গরুর দুধ দেয়া উচিৎ না। ১২ মাস পর থেকে গরুর দুধ খাওয়ানো যেতে পারে কি? নবজতকের প্রথম জন্মদিন পালনের পর থেকেই ধীরে ধীরে তাকে গরুর দুধ খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে। কারণ এই সময় বাচ্চার হজম
ক্ষমতা গরুর দুধকে হজম করে নিতে সক্ষম হয়। ফলে কোনও ধরনের শারীরিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। প্রসঙ্গত, গরুর দুধে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান এই সময় বাচ্চার হাড় এবং দাঁতের গঠনে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রক্ত প্রবাহ ভাল করার পাশপাশি পেশির গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, গরুর দুধে উপস্থিত ভিটামিন-ডি আরও নানাভাবে শিশুকে সুস্থ-সবল থাকতে
সাহায্য করে থাকে। এক্ষেত্রে একটা জিনিস জেনে রাখা প্রয়োজন যে, গরুর দুধে প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকে। তাই তো ছোট বয়সে বাচ্চাদের বেশি করে এই দুধ খাওয়ালে বড় বয়সে গিয়ে হাড়েক রোগ, ব্লাড প্রেসার, স্ট্রোক এবং কোলন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে