যে কারণে আপনার শিশুটি পড়াশুনায় অমনোযোগী
Image: google

যে কারণে আপনার শিশুটি পড়াশুনায় অমনোযোগী!

প্রতিটি অভিভাবকই চায় তার শিশুটি পড়াশুনায় আগ্রহী হয়ে উঠুক এবং তার ভবিষ্যৎ জীবনে সে সফল হোক। কিন্তু তা সত্যেও অধিকাংশ শিশুই পড়াশোনায় অমনোযোগী। ঠিক কী কারণে একটি শিশু অমনোযোগী থাকে এবং

কী কী কাজ করলে পড়াশুনায় শিশুর মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে সে বিষয়গুলো নিয়েই লেখাটি সাজানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি জানতে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে নিন-এদেশের অধিকাংশ অভিভাবকের একটা কমন প্রশ্ন হলোওদের সন্তান পারে, কিন্তু আমার সন্তান পারে না কেন? আপনার

এই প্রশ্নের জবাব দিতেই পুরো লেখাটিতে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই আলোচনা থেকে যেমন জানতে পারবেন আপনার শিশুর না পারার কারণ, সেই সাথে আরোও জানতে পারবেন কী কী কাজ করলে আপনার শিশুটিও অন্যদের মতো পারবে। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ লেখাটি একবার পড়ে নিন-

1. পিতা-মাতার উদাসীনতা: একটি শিশুর সাফল্যের পিছনে পিতা-মাতার সঠিক পরিচর্যা অত্যাবশ্যকীয় একটি কাজ। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ অভিভাবক, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকগণ এ ব্যপারে খুবই উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে থাকেন।দেখা যায়- শিশুটি সময় মত খাবার খেতে না আসলে মায়েরা নিজের কাজের ব্যাঘাতের জন্য সন্তানকে যেরূপ শাসন করে থাকেন, শিশুর ভবিষ্য উজ্জ্বল করার জন্য পড়াশুনার ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দিতে দেখা যায় না। অধিকাংশ পিতা মাতাই মনে করেন এই দায়িত্ব শুধুমাত্র শিক্ষকদের। তারা এটা চিন্তা

করেন না যে, শিশুর ভবিষ্যৎ সফলতা ও ব্যর্থতার ফলাফল সরাসরি তাদেরকেই শেষ পর্যন্ত ভোগ করতে হবে।
2. গাইডলাইনে বাড়াবাড়ি: কিছু অভিভাবক আছেন যারা সন্তানদের পড়াশুনার ব্যাপারে সতর্ক। কিন্তু তাদের বেলাতেও একটা ভুল পরিলক্ষিত হয়। তারা পড়াশুনার ব্যাপারে শিশুদেরকে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি রকমের শাসন করে থাকেন। আমাদেরকেএকটি বিষয় মনে রাখা উচিত যে, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়।দেখা যায় অতিরিক্ত রকমের শাসনের ফলে শিশুটি ঘাবড়ে যায় এবং পড়াশুনাকে ভয়ংকর কিছু মনে করে

হাল ছেড়ে দেয়। তাই শিশুদেরকে বেশি শাসন করে পড়াশুনার প্রতি ভয় তৈরি করা উচিত নয়।
3. অবাস্তব ও কাল্পনিক উচ্চাশা: যদি ছাত্রটি পড়াশুনায় মনোযোগী হয় তবে সেখানেও পিতামাতার একটি ভুল পরিলক্ষিত হয়। তারা তখন সামর্থের থেকেও বড় বড় আশা করে বসে থাকেন। তারা তখন ভাবতে থাকেন শিশুকে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে। কিন্তু তারা চিন্তা করেন না যে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ছাড়াও সম্মানজন অনেক পেশা এবং চাকুরি আছে। সততার সাথে চাকুরি করলে শিশুটি যে কোন জায়গাতেই সম্মানের আসনে সমাসীন হতে পারবে।
4. অযাচিত হতাশা: একটি শিশু কোন কারণে হঠাৎ খারপ রেজাল্ট করে ফেললে পিতামাতা সাথে সাথে একেবারে নিরাশ হয়ে যান এবং শিশুদেরকে এতটা শাসন করা শুরু করেন যে, এতে তারা ঘাবড়ে যায় এবং হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু তারা বুঝতে চান না যে, আজকের ফলাফলটিই চূড়ান্ত নয়। শিশুর এই খারাপ রেজাল্টের সময় তাকে সাপোর্ট দিয়ে পরবর্তী সময়ের জন্য সঠিক গাইডলাইন দিলে হয়তো সে

আবার ভালো করতে পারবে। 5.সফল ও মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী না জানানো: শিশুদের ব্যর্থতার বড় একটি কারণ হলো তাদেরকে সফল ও মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী সম্পর্কে না জানানো। শিশুদের সামনে মহৎ ব্যক্তিদের জীবনীকে উদাহরণ হিসেবে রাখলে এই ‍উপাদাগুলো তাদের সফল হতে একাগ্রতা বাড়িয়ে দেবে এবং তারা পরিশ্রমের মাঝে গৌরব খোঁজে পাবে।
6. জীবনের জয়-পরাজয় সম্পর্কে না জানানো: প্রতিটি মানুষের জীবনেই জয়-পরাজয় আছে। যুগের মনীষীরা পরাজয়ে হতাশ না হয়ে নিজেদের কর্তব্যকাজে অটল থেকেই সফলতা ছিনিয়ে এনেছেন। তাই প্রতিটি শিশুকে শেখানো উচিত দুই চারবার ব্যর্থ হলেই হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। বরং শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারাই প্রকৃত সফলতা। তাই মাঝ পথে খারপ কিছু ঘটলে দমে যাওয়া উচিত নয়; বরং পরিশ্রম

বাড়িয়ে দিয়ে চেষ্টায় লেগে থাকলে অবশ্যই সফলতা আসবে।
7. সফলতায় পুরষ্কৃত না করা: শিশুর প্রতিটি সফলতায় তাকে পুরষ্কৃত করা উচিত, হোক তা খুব সামান্য কিছু। হতে পারে সেটা প্রতিদিনের পড়ার টার্গেট পূরণ করা বা ভালো কোন কাজ সম্পাদন করা। কাজে পুরষ্কার থাকলে তা আর কঠিণ মনে হয় না। ফলে শিশুরা কাজটি চাপহীন এবং আগ্রহের সাথে শেষ করতে পারবে। কিন্তু এই কাজটা আমরা কয়জন অভিভাবক করে থাকি?
8. শিক্ষকগণ কর্তৃক অভিভাবকগণকে কাউন্সিলিং এর অভাব: অধিকাংশ শিক্ষক ছাত্রদেরকে ক্লাশে পাঠদান করেই দায়িত্ব শেষ করে দেন। কিন্তু দেখা যায়, গ্রামের অধিকাংশ পিতামাতাই শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন। তাই মাঝে মাঝে অভিভাবক সমাবেশ করে তাদেরকে শিশুদের

গাইডলাইনে করনীয় বিষয়ে সচেতন করা এবং প্রতিদিনের একটি ভারসাম্যপূর্ণ রুটিন বুঝিয়ে দিলে শিশু এবং অভিভাবকগণ সকলেই উপকৃত হবেন।
9. শিক্ষকগণকে বলবো- দিনশেষে একজন শিক্ষক ছাত্রদের সাফল্যেই সমাজে মাথা উচু করে চলার গৌরব অর্জন করে থাকেন। একটি ভারসাম্যপূর্ণ রুটিন: সম্মানিত পাঠক! আপনার শিশুর সফলতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই ‍রুটিন। উপরের লেখাগুলোকে এটার পরিপূরক হিসেবে ধরে নিতে পারেন। একটি শিশুর সফলতার জন্য অন্যকিছু করেন বা না করেন, তার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ রুটিন অবশ্যই প্রস্তুত করবেন।

Check Also

সন্তান সব সময়ে মুখে মুখে তর্ক করলে আপনি যা করবেন!

সন্তান সব সময়ে মুখে মুখে তর্ক করলে আপনি যা করবেন!

পরিবারের ছোট সদস্যরা মাঝে মধ্যেই ভুল করে। তা সে জেনে হোক কিংবা না যে। এই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *