সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে হলে শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখাটা খুব দরকার। এতে করে শরীরে ভেতরের সব ময়লা আবর্জনা ও বিষাক্ত দ্রব্য বেরিয়ে যায় এবং শরীর সুস্থ থাকে। আপনি কি খাচ্ছেন নিচের উল্লেখ করা এ খাবারগুলো? বিট: শেকড় জাতীয় বহু গুণাগুণসম্পন্ন এই
সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও বিটাইন নামের এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা বিশেষ ধরনের উদ্ভিজ্জ রঞ্জক পদার্থ। আর এই রঞ্জক পদার্থের কারণেই মূলত সবজিটি স্বতন্ত্র লাল রঙ ধারণ করে। বিটাইন কোষের গঠন উন্নত ও ক্ষতিপূরণ করে এবং যকৃতের
কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে। আপনার শরীর থেকে যত ধরনের বিষক্রিয়াজনিত পদার্থ বেরিয়ে আসে, যকৃত সেগুলো থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করে। তাই এর উপকারিতা পেতে আপনার খাবারের তালিকায় প্রাকৃতিক পরিষ্কারক এই সবজিটি রাখতে ভুলবেন না।
চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক সে সব খাবার সর্ম্পকে –
পরামর্শ: রান্নার ক্ষেত্রে, বিটের মধ্যে থাকা পুষ্টির সর্বোচ্চ গুণাগুণ পেতে খোসাসহ সিদ্ধ করুন বা ভাপিয়ে নিন। মূল খাবারের সহযোগী আইটেম হিসেবে বিটকে ঝলসিয়ে বা সেঁকে খেলেও দারুণ স্বাদ পাওয়া যায়। এছাড়াও কাঁচা বিট দিয়ে বানানো স্বাস্থ্যসম্মত স্মুদি (জুসের মতো করে বানানো পানীয়) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সালাদের সাথে কুচি করে কেটেও বিট (কাঁচা) খাওয়া যায়। পিঁয়াজ ও
রসুন: পিঁয়াজ ও রসুন, এই দুটোর মধ্যেই আছে ফ্ল্যাভোনয়েড, যা গ্লুটাথোন উৎপাদনে সাহায্য করে।গ্লুটাথোন হলো যকৃতের সবচাইতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর মধ্যে একটি। এগুলো যকৃতকে উদ্দীপ্ত করে পরিষ্কারক এনজাইম তৈরি করার জন্য, যা হজম প্রক্রিয়ার পর শরীর থেকে বিষাক্ত সব অবশিষ্টাংশ বের করে দেয়। তাছাড়া এটি যকৃতের মতো কার্যকরী অঙ্গের কাজ কিছুটা কমিয়ে দেয় এবং এর রয়েছে জীবাণুনাশক, পরজীবী জীবাণু প্রতিরোধক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মতো বৈশিষ্ট্য। পরামর্শ: যেকোনো ধরনের ডিটক্স ডায়েটে এই দুটি উপাদান অবশ্যই থাকা চাই। কাঁচা অথবা ভাজা রসুন সালাদে আনে ভিন্ন মাত্রা ও স্বাদ।সবুজ শাকসবজি: গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি
আপনার হজম প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিল ডিটক্স করার শক্তি বৃদ্ধি করে। এই উদ্ভিদ রঞ্জক পদার্থটি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সূর্যের আলো ব্যবহার করে শক্তি উৎপন্ন করে। এছাড়াও এটি আমাদের শরীরে জমে থাকা গুরুপাক জাতীয় জিনিস বের করে দিয়ে পরিষ্কার রাখে। ক্লোরোফিলে আরও রয়েছে জ্বালাপোড়া কম করার মতো গুণাগুণ। এটি শরীরের ক্ষারীয় তরল পদার্থ বের করে দেয়ার ক্ষেত্রে শরীরকে সাহায্য করে। আর গাঢ় শাকসবজিতে থাকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ফাইবার, আয়রন, ফলিক এসিড, ক্লোরোফিল, ফসফরাস, ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে। পরামর্শ: এখনকার বেশিরভাগ খাবরেই প্রচুর পরিমাণে এসিড থাকে। তাই নিয়মিত পালং শাক, ব্রকলি ও গাঢ় রঙের শাকসবজি
অবশ্যই খাওয়ার চেষ্টা করুন। করল্লার জুস বা পালং শাকের স্যুপ বানিয়েও খেতে পারেন। লেবু পানি: টক জাতীয় ফলগুলো আপনার হজমশক্তির ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। কারণ এগুলোতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই শক্তিশালী যৌগগুলো যকৃতের এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে শরীরের জীবাণুগুলোকে দ্রাব্য পদার্থে রূপান্তর করে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। আর এ কারণেই আপনার শরীর থেকে সকল প্রকার দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যায়। পরামর্শ: প্রতিদিন সকালে কুসুম গরম পানির সাথে এক চিমটি লবণ ও মধু মিশিয়ে পান করে নিন। এই পানীয়টি অবশ্যই সকালবেলায় এবং খালি পেটে খেতে হবে। এটি কর্মব্যস্ত দিনে শক্তি যোগাবে, পেট পরিষ্কার
রাখবে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে এবং ত্বক সুন্দর রাখবে। বিভিন্ন ধরনের বিচি ও বাদাম: স্ন্যাক্স হিসেবে আপনি কী খান? নিশ্চয়ই ভাজাপোড়া! এগুলো যে স্বাস্থ্যসম্মত নয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেক্ষেত্রে বাদাম ও বিচি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স, যা সবসময় সাথেও রাখতে পারবেন; যেমন কাজু, আখরোট, পেস্তা, চীনা ও কাঠ বাদাম, তিসি ইত্যাদি। পরামর্শ: নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে যকৃতের চারপাশে জমে থাকা চর্বি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আখরোটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আরজিনাইন নামক এসিড, যা আপনার যকৃত থেকে অ্যামোনিয়া ডিটক্স করাতে সহায়ক। এছাড়াও এটি আপনার মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে ভূমিকা রাখে। আপনার মন-মেজাজ ভালো রাখবে। গুঁড়ো করা তিসিতে রয়েছে
ফাইবার, যা অন্ত্রনালী থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। এছাড়াও তিসি ক্ষুধা এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। টক দই: টক দই প্রোবায়োটিকস্-এ ভরপুর! এছাড়া এটি স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া সরবারহ করে, যা শরীরে শক্তির যোগান দেয় এবং হজমশক্তি কার্যকর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। টক দই আপনার পাকস্থলীতে ভালো ব্যাকটেরিয়া নিয়ে আসে, যা শুধুমাত্র হজমশক্তিই বাড়ায় না, বরং ক্ষতিকর
সব পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়। পরামর্শ: লো-ফ্যাট বা একদমই ফ্যাট ছাড়া টক দই খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এসব টক দইতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। তাই টক দই কেনার সময় অবশ্যই প্যাকেট বা কৌটার গায়ে উপাদানগুলো বিবেচনা করে কিনুন।
ডিসক্লেইমার: প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেজ্ঞের পরামর্শ নিন।