পাকা চুল কালো করার ৯টি প্রাকৃতিক উপায়
Image: google

পাকা চুল কালো করার ৯টি প্রাকৃতিক উপায়!

যারা কোনও কৃত্রিম উপায় অবলম্বণ করতে চান না, তাদের জন্যে পাকা চুল কাল করার প্রাকৃতিক উপায় আছে। অনেকেই আছেন যারা কেমিক্যাল জাতীয় কোনও প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে চান, তারাই মূলত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় চুল কালো করার চিন্তা করে

থাকেন। কম বয়সে চুল পাকা সত্যিই চিন্তার বিষয়। আর বর্তমানে এই চিন্তায় আছেন অসংখ্য মানুষ যারা আয়নার সামনে দাঁড়ালে মনে হয় দু:স্বপ্ন দেখছেন। কারণ, স্বপ্নেও ভাবেননি বার্ধক্যের মতো এত অল্প বয়সে চুলে পাকন ধরবে। কিন্তু কেন? মেডিকেল সায়েন্সসহ আরো কিছু

গবেষণা থেকে কম বয়সে চুল পাকার ৮টি কারণ পাওয়া গিয়েছে। পড়ে দেখুন এই কারণগুলোর মধ্য থেকে আপনার সঙ্গে কোন না কোনটি মিলে যাবে। মিলুক বা না মিলুক, আপনি নিশ্চয়ই পাকা চুল নিয়ে মানসিক অশান্তিতে রয়েছেন। একজন সৌন্দর্য্য সচেতন মানুষ হিসেবে

আপনি নিশ্চয়ই কৃত্রিম হেয়ার কালার ব্যবহার করতে চান না। কারণ, আপনি জানেন এগুলো চুলের জন্যে ক্ষতিকর এবং এই কালার অস্থায়ী। তাই, আমরা কিছু ন্যাচারাল পদ্ধতি নিয়ে হাজির হলাম যেগুলো ব্যবহার করে আপনি অনেকটাই স্থায়ীভাবে চুল কালো করতে পারবেন। পাকা চুল কাল করার প্রাকৃতিক উপায় চুল কাল করার উপায়

1. ব্ল্যাক টি ও পানি ব্ল্যাক টি অল্প বয়সে চুল পাকার প্রাকৃতিক সমাধান দিতে পারে। কেননা, ব্ল্যাক টি’তে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর ক্যাফেইন রয়েছে যা চুলে সাধারণ ডার্ক কালার ক্রিয়েট করে, চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং চুলকে শক্ত ও শাইনি করে তোলে। এটি তৈরি করা খুবই সহজ, কেবল মাত্র দু’টি উপাদান প্রয়োজন। সেগুলো হলো- ২ টেবিল চামচ কালো চা পাতা পানি যেভাবে প্যাকটি প্রস্তুত করবেন- পরিমাণ মতো চা পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিন। ঘরের তাপমাত্রার সাথে মিলিয়ে ঠান্ডা করে নিন। চায়ের পাতাগুলো তুলে নিন আর চাপাতার পানিটা চুলে লাগান। আপনার চুল যদি বেশি বড় হয়, তবে পানিটা একটা বোতলে ঢুকিয়ে চুলে স্প্রে করতে পারেন। অবশ্যই প্রতিটা চুলের গোড়ায় যেন পানি প্রবেশ করে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। এক থেকে দুই ঘন্টা পর নরমাল পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। কোনভাবেই শ্যাম্পু বা সাবান ইউজ করবেন না।
2. নারিকেল তেল ও লেবু আপনার রান্না ঘরে থাকা ঘরোয়া উপাদান দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন চুল কালো করার এই প্রাকৃতিক প্যাকটি। চুলের জন্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও পুষ্টিতে ভরপুর এই তেলটি বহুকাল আগে থেকেই চুল পড়া প্রতিরোধ, শক্ত ও শাইনি করা এবং কাল করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অন্যদিকে, লেব হচ্ছে ভিটামিন সি এর সিরিয়াস সোর্স যাতে আরো রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমান অ্যান্টি-

অক্সিডেন্ট। এমনকি, এতে আরো আছে সাইটিক এসিড, ফ্ল্যাবনয়েড এবং আয়রন। আর লেবুতে থাকা এই সকল ভিটামিন ও মিনারেল চুলের জন্যে অত্যন্ত উপকারি। বিশেষত, এটি সাদা চুল কাল করার জন্যে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। যেসব উপাদান নেবেন- নারিকেল তেল (পুরো চুলে ভালভাবে মাখার জন্যে যতটুকু প্রয়োজন।) ৩ টেবিল চামচ লেবুর রস যেভাবে তৈরি করবেন- নারিকেল তেল ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। ধীরে ধীরে ও মোলায়েমভাবে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। পুরো চুল ভাল করে একটি চিরুণী দিয়ে আঁচড়ে নিন। এক ঘন্টা পর সব সময় ব্যবহার করেন এমন শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। আমলকির গুঁড়ো ও নারিকেল তেল আমলকি চুলের জন্যে সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। এটি চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে প্রাচীণকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাথার ত্বকের জন্যে প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে ছোট এই ফলটিতে। সেই সাথে আছে মিনারেল, অ্যামিনো এসিড এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। অন্যদিকে, নারিকেল তেলে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া নানা রকম ভিটামিন এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগায়। একই সাথে, এটি চুলের ফলিকল থেকে সিবাম বিল্ড-আপ অপসারণ করতে সহায়তা করে। ফলে, প্রাকৃতিকভাবেই চুল দ্রুত বড় হয়, ঘন কালো হয়।
3. নারিকেল তেল এবং আমলকির গুঁড়ো পাকা চুল কালো করার প্রাকৃতিক পদ্ধতি। কি কি উপাদান আর কতটুকু নেবেন- নারিকেল তেল – ৫০০ মিলি আমলকি – এক কাপ প্যাকটি প্রস্তুত করবেন যেভাবে- হাম্বল দিস্তা, লোহার পাত্র কিংবা যে কোনও শক্ত পাত্রে এক কাপ পরিমাণ

আমলকি পিষে নিন। পিষতে পিষতে একদম গুঁড়ো গুঁড়ো করে ফেলুন। এর সাথে ৫০০ মিলি নারিকেল তেল মেশান। মিশ্রণটিকে এবার চুলোয় চড়িয়ে ২০ মিনিট ধরে গরম করুন। এরপর নামিয়ে ফেলুন এবং ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। পরের দিন তেলটা চেঁকে নিয়ে বোতলে ভরে রাখুন এবং প্রতিদিন একবার এই তেল চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন।
4. আমলকি ও মেহেদী পাতা সাদা বা বাদামী হয়ে যাওয়া চুলকে কালো করার জন্যে প্রাকৃতিক প্যাক হিসেবে আমলকি ও মেহেদী পাতার মিশ্রণ অসাধারণ উপকারি। আমলিকতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে আর চুলের জন্যে মেহেদী পাতার গুনাগুন বর্ণনা করার বিশেষ প্রয়োজন নেই। চুলের জন্যে যত পুষ্টি প্রয়োজন তার প্রায় সবই আছে মেহেদী পাতায়। আর এ দুটি উপাদান যখন একত্রিত হয়, তখন এটি চুলকে অল্প বয়সে পেকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে, নরম, সিল্কি ও শাইনি করে। এই প্যাকটির জন্যে প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ- ফ্রেশ মেহেদী পাতা ৩ টেবিল চামচ আমলকি ১ টেবিল চামচ কপি পাউডার পরিমাণ মতো পানি প্রাকৃতিক প্যাকটি প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া- মেহেদী

পাতা বেটে নিন। পাটা কিংবা অন্য কিছুতে পিষে নিতে পারেন। এইকভাবে, আমলকি পিষে নিন। আমলকি, মেহেদী পাতা ও কপি পাউডার একসাথে মিশিয়ে নিন। প্রয়োজন অনুভূত হলে পানি মিক্স করতে পারেন। প্রতিদিন এই প্যাকটি একবার মাথায় ভাল করে ম্যাসাজ করুন। দুই ঘন্টা পর হালকা সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
5. মেহেদী পাতা ও ইন্ডিগো পাউডার ইন্ডিগো একটি অর্গানিক কম্পাউন্ড যা নীল রঙ থেকে স্বতন্ত্র। এটি কৌটা আকারে কসমেটিকের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালো করতে ইন্ডিগো পাউডার বড় বড় সেলুনগুলোতে ব্যবহৃত হয়। যখন ইন্ডোগো পাউডার ও মেহেদী পাতা মিক্স করা হয়, তখন দুটো মিলে চুলের উপর চমৎকার একটি কালো রঙের শেড তৈরি করে। মিশ্রণটিতে যেসব উপাদান লাগবে- মেহেদী পাতার গুঁড়ো ১০০ গ্রাম। পিউর, প্রাকৃতিক ও অর্গানিক ইন্ডিগো পাউডার ১০০ গ্রাম। এক টেবিল চামচ কপি পাউডার। ২টেবিল চামচ লেবুর রস। এক টেবিল চামচ টক দই। পরিমাণ মতো ব্ল্যাক টি ওয়াটার। যেভাবে এটি তৈরি করবেন- বেটে কিংবা পিষে মেহেদী পাতার রস

বের করে নিন। কপি, লেবুর রস, টক দই ও ব্ল্যাক টি এর সাথে মেশান। মিশ্রণটি এভাবে এক রাত রেখে দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে এই পেস্টটি চুলে ভাল করে মাখুন। দুই ঘন্টা পর শ্যাম্পু ছাড়া ধুয়ে ফেলুন।
6. কাঠ বাদাম তেল ও লেবুর রস কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আছে যা চুলের জন্যে সিরিয়াস প্রয়োজন। কাঠ বাদামের তেল চুলের শিকড়ে পর্যাপ্ত পুষ্টি যোগায় এবং চুল পাকা প্রতিরোধ করে। বাজার থেকে বাদাম তেল কিনে আনুন আর ঘর থেকে লেবু নিন। দুই ভাগ বাদাম তেল ও তিন ভাগ পানি মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভাল করে ম্যাসাজ করে নিন। আধা ঘন্টা পর পুরোপুরি ধুয়ে ফেলুন।
7. অলিভ অয়েল ও পেঁয়াজের রস চুল পড়া বন্ধ করা, দ্রুত বড় করা, পাকা হওয়া প্রতিরোধ করাসহ আরো অসংখ্য উপকার রয়েছে পেঁয়াজের রসে। পেঁয়াজের রস চুলে অ্যানজাইম, ক্যাটালেস ও কালো রং বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে অলিভ অয়েল এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা চুলের খুশকি দূর করে, চুল পড়া প্রতিরোধ করে, একই সাথে চুলকে শাইনি ও ঘন-কালো করতে সাহায্য করে। ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস ও এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিক্স করে আলতোভাবে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। আর আঘা ঘন্টা রেখে দিয়ে গোসল করে ফেলুন। চাইলে এর সাথে অল্প পরিমাণে লেবুর রসও অ্যাড করতে পারেন।
8. গোলমরিচ ও লেবুর রস চুলের স্বাভাবিক রঙ ধরে রাখাসহ অসংখ্য উপকার রয়েছে গোল মরিচের মাঝে। আপনি যদি চুলে ক্যামিকেল যুক্ত

ডাই ডিরেক্টলি ব্যবহার করতে না চান এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চুল কাল করতে চান, তবে গোলমরিচ আর লেবুর রসের মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। এক টেবিল চামচ গোল মরিচের গুঁড়ো অল্প পরিমাণ লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে নিন। সঙ্গে একটু টক দিলে আরো ভাল হবে। মিশ্রণটি চুলের প্রতিটি গোড়ায় গোড়ায় ভাল করে ম্যাসাজ করে নিন। এরপর এক ঘন্টা অপেক্ষা করুন এবং হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
9. জবা ফুল ও পানি জবা ফুলে থাকা পাওয়াফুল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও নানা রকম ভিটামিন চুলে মেলানিন ও পিগমেন্ট উৎপন্ন করে। আর এটি চুলকে দেয় ন্যাচারাল কালার। চুল কাল করা ছাড়াও জবা ফুল খুশকি দূর করা, শুকনো চুলকে সফট্ ও সিল্কি করা এবং চুল পড়া বন্ধ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারি। কয়েকটি জবা ফুল নিয়ে ভাল করে পিষে ফেলুন এবং অল্প পরিমান পানিতে মিশিয়ে সারারাত রেখে দিন।

পরের দিন জবা ফুলের এই রস মাথায় মাখুন, আলতো করে যাতে প্রতিটি চুলের গোড়ায় পৌঁছে যায়। ঘন্টা খানেক পর ধুয়ে নিন। পাকা চুল নিয়ে চলাফেরা করা অত্যন্ত বিব্রতকর। তরুণ-তরুণীরা আরো বেশি বিব্রত হন কলেজ কিংবা ভার্সিটি গিয়ে। তাই, এ থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোর যে কোনটি কিংবা একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবেই চুল পাকা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডিসক্লেইমার: প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেজ্ঞের পরামর্শ নিন।

Check Also

খুশকির সমস্যা চিরতরে দূর হবে এই ঘরোয়া টোটকায়

খুশকির সমস্যা চিরতরে দূর হবে এই ঘরোয়া টোটকায়

শীতকালে অনেকের চুলেই খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। খুশকি কেবল চুলকে ময়লাই দেখায় না, চুলের বিভিন্ন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *