ত্বকের যত্নে 'অ্যান্টি এজিং’এর ঘরোয়া টিপস
Image: google

ত্বকের যত্নে ‘অ্যান্টি এজিং’এর ঘরোয়া টিপস!

আপনার যতই বয়স হোক না কেন, তার ছাপ আপনাদের স্কিনের ওপর পড়বে কেন! বরং ৪৫ বছর বয়সেও যদি আপনাকে ৩৫ বছর বয়সী দেখতে লাগে সেটাই তো ক্রেডিট। এখন তো আমরা আবার বয়সের আগেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। এর কারণ অবশ্য দুশ্চিন্তা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া,

অনিয়মিত জীবন। কিন্তু কিছু সহজ ঘরোয়া টিপসের মাধ্যমে আপনার বয়সকে সহজেই লক করে দেওয়া যায়, যার ছাপ স্কিনে আর পড়বে না। ক. সাধারণ কিছু নিয়মঃ ঘরে থেকেই আপনি খুব সাধারণ কিছু জিনিস মানতে পারেন। আর তাতেই অ্যান্টি এজিং এর ক্ষেত্রে আপনি পাবেন আকাশ পাতাল পার্থক্য। ১. পর্যাপ্ত ঘুমঃ রাতে মহিলা শুয়ে আছেন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্কিন তার ফ্লেক্সিবেলিটি হারিয়ে ফেলে। আর এর ফলে

আমাদের স্কিনের যে টানটান ভাব তা কমে যায়। ফলস্বরূপ আমরা দেখতে পাই বলিরেখা, চোখের নিচে কালি। এই সবের থেকে মুক্তি পেতে তাই আমাদের অবশ্যই দরকার নিয়ম করে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম। তাহলেই স্কিন নারিশড থাকবে ভিতর থেকে। ২. পরিমাণ মতো নুনঃ মাত্রাতিরিক্ত নুন স্কিনের জন্য খুবই খারাপ। আমরা অনেকেই খেতে বসে পাতে অতিরিক্ত নুন নিই। বেশি সোডিয়াম কিন্তু আমাদের স্কিন থেকে

ময়েশ্চার বের করে দেয়। চোখের নিচের ফোলা ভাব অনেক সময়ে এই অতিরিক্ত নুন খাওয়ার জন্য হতে পারে। তাই সারাদিনে ১ চামচের বেশি নুন না খাওয়াই ভালো। ৩. উপযুক্ত পরিমাণে প্রোটিনঃ প্রোটিন আমাদের শক্তির বা এনার্জির উৎস। যত আমাদের শরীরে এনার্জি থাকবে তত বুড়িয়ে যাওয়া ভাব কম আসবে। প্রোটিন কম হলেই আমাদের স্কিন তার জীবন হারিয়ে ফেলতে থাকে। ফলে বলিরেখা, কালো ভাব মুখে এই সব আসতে থাকে। তাই প্রোটিন যুক্ত খাওয়ার মানে দুধ, দই, চিজ, ডাল, ডিম, বাদাম, মাছ, মাংস খাওয়া উচিত ভালো করে। এতে স্কিন

টানটান থাকে। ৪. পর্যাপ্ত জলঃ জল আমাদের হাইড্রেটেড রাখে। আর হাইড্রেটেড স্কিন মানেই সুস্থ স্কিন। শরীরে জল কমে আসলে স্কিন কুঁচকে যাবে, ফলে বলিরেখা সহজেই হবে। শীতকালে আমাদের যে কারণে স্কিন কুঁচকে যায় খানিক। কপালে ভাঁজ পড়ে যেতে পারে। অর্থাৎ স্কিনকে শুকিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। আর তাই স্কিনে জলের উপযুক্ত সরবরাহ হওয়া দরকার। রোজ আট থেকে দশ গ্লাস জল খাওয়া দরকার। ৫. শর্করা খাওয়া কমানঃ শর্করা আমরা মূলত দুই ভাবে নিই। এক হল চিনির মাধ্যমে আর দুই হল কার্বোহাইড্রেট মানে ভাত বা রুটির মাধ্যমে। এই চিনি আর ভাত-রুটি খাওয়া কম করা দরকার। চিনি খাওয়া বন্ধ করলে এমন কিছু সমস্যা নেই। আর ভাত বা রুটি কম খান।

এগুলি আসলে আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর ইনসুলিন আমাদের স্কিনের সজীবতা নষ্ট করে দেয়। ৬. অ্যালোভেরার রসঃ অ্যালোভেরার রস অ্যালোভেরা স্কিনের জন্য কত ভালো তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু মুখে অ্যাপ্লাই করার থেকেও অ্যালোভেরা রস খেলে বেশি ভালো কাজ দেয়। অ্যান্টি এজিং সমস্যায় অ্যালোভেরা দারুণ কাজ দেয়। খেতে না পারলে অ্যালোভেরা জেল মুখে মাখলেও হবে। ৭. সান প্রোটেকশনঃ সূর্য আমাদের স্কিনের ওপর খুব বেশি খারাপ প্রভাব ফেলে। সরাসরি রোদে গেলে আমাদের স্কিনে যে পরিমাণ ট্যান পড়ে তা তোলা খুব পরিশ্রমের ব্যাপার হয়ে যায়। এই ট্যান মুখের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট করে দেয়। তাই মনে হয় আমরা

বুড়িয়ে গেছি। তাই সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে যাওয়া একেবারে চলবে না। ৮. স্কিনের নারিশমেন্টঃ আমাদের এমন খাবার খাওয়া উচিত যাতে আমাদের স্কিন নারিশড থাকে। তার জন্য সবার আগে দরকার সবুজ সবজি আর ফল আমাদের রোজের খাদ্য তালিকায় রাখা। শশা, কলা, লেবু এই সব ফল অ্যান্টি এজিং এর ক্ষেত্রে দারুণ কাজ দেয়। তাই অসময়ে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে এই ফল অবশ্যই খান। ৯. স্ট্রেস কমানঃ মেডিটেসন স্ট্রেস মানেই কপালে ভাঁজ, আর কপালে ভাঁজ মানেই অকালে বুড়িয়ে যাওয়া। তাই স্ট্রেস কমান। রোজ মেডিটেসন করুন। যে চিন্তাগুলি স্ট্রেস আনে সেগুলি কম করুন। আর জোরে হাসুন। স্ট্রেস কমলে স্কিন এমনিই অনেক সজীব থাকে। তাই এজিং এর সমস্যা আর

আসে না। খ. অ্যান্টি এজিং ফেস প্যাকঃ এবার আসব ঘরোয়া ফেস প্যাকের কথায়। বাজারের দামী দামী অ্যান্টি এজিং ফেস প্যাকের থেকে এই ঘরোয়া ফেস প্যাক কিন্তু কোনও অংশে কম নয়। ১. রোজ ওয়াটার প্যাকঃ উপকরণঃ ২ চা চামচ গোলাপ জল, হাফ চা চামচ পাতিলেবুর রস, কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন। পদ্ধতিঃ এই সব উপকরণ একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ মুখে তুলোর বলের সাহায্যে অ্যাপ্লাই করুন। জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার কোনও দরকার নেই। আপনি দেখবেন আপনার স্কিন এই মিশ্রণ টেনে নেবে। এক দিন অন্তর অন্তর এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন রাতে ঘুমোবার আগে। এতে স্কিন দারুণ নারিশড হবে। ২. আলুর রসের প্যাকঃ উপকরণঃ পরিমাণ মতো

আলুর রস। পদ্ধতিঃ আলু থেকে রস মুখে লাগানো আলু থেকে রস বের করে নিন। এই রস এবার তুলোর সাহায্যে মুখে লাগিয়ে নিন আর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিলেই দেখবেন মুখ কত পরিষ্কার আর ফ্রেশ লাগছে। এটি সপ্তাহে দু দিন অন্তত করুন। ৩. মধুর প্যাকঃ উপকরণঃ দুই চামচ বিশুদ্ধ মধু। পদ্ধতিঃ মধু নিয়ে মুখে এবং গলায় রাব করুন। আপার সার্কুলার মোশনে রাব করুন মানে হাত ম্যাসাজ করার সময়ে নিচ থেকে উপরে উঠবে। ২ মিনিট ধরে এটি করে মুখে মধু রেখে দিন ১৫ মিনিটের জন্য। তারপর ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে নিন। এক দিন অন্তর এটি করতে পারেন। মধু খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার। এটি স্কিন টাইট রাখতে সাহায্য করে। আর বলিরেখার

মতো সমস্যা মধু সহজে আসতে দেয় না। ৪. কলার প্যাকঃ উপকরণঃ ১টা পাকা কলা, ১ চা চামচ গোলাপ জল, ১ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ দই। পদ্ধতিঃ প্রথমে কলা ভালো করে চটকে নিন। এর মধ্যে এবার মধু, গোলাপ জল আর দই মিশিয়ে একটা ভারী প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক মুখে মেখে অপেক্ষা করুন ২০ মিনিট। তারপর ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে দুই দিন করতেই পারেন। আগেই বলেছিলাম, কলার মধ্যে অ্যান্টি এজিং প্রপার্টি আছে। তাই এই প্যাক ব্যবহার করা মাস্ট। ৫. পেঁপের প্যাকঃ উপকরণঃ কয়েক টুকরো পাকা পেঁপে। পদ্ধতিঃ পাকা পেঁপে কয়েক টুকরো নিয়ে ভালো করে চটকে নিন। এবার এই মিশ্রণ মুখে, গলায় মেখে ২০ মিনিট রেখে দিন। ২০ মিনিট পর

হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করে গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দু দিন অনায়াসে এটি করতে পারেন। পেঁপে আপনার ত্বকে হারিয়ে যাওয়া ফ্লেকসিবেলিটি আনবে। ৬. দইয়ের প্যাকঃ দইয়ের প্যাক উপকরণঃ দুই চামচ টক দই, এক চামচ মধু, এক চামচ পাতিলেবুর রস, একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল, সামান্য হলুদ গুঁড়ো। পদ্ধতিঃ সব উপকরণ মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। এবার ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙে এই মিশ্রণে মেশান আর ভালো করে আরেকবার মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ মুখে মেখে রেখে দিন ১৫ মিনিটের জন্য। তারপর উষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার এটি করুন। দই খুব ভালো উৎস ভিটামিন, মিনারেলস আর এনজাইমের। দই তাই বলিরেখা আসতে দেয় না। দইতে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড স্কিন টাইট রাখে।

Check Also

খুশকির সমস্যা চিরতরে দূর হবে এই ঘরোয়া টোটকায়

খুশকির সমস্যা চিরতরে দূর হবে এই ঘরোয়া টোটকায়

শীতকালে অনেকের চুলেই খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। খুশকি কেবল চুলকে ময়লাই দেখায় না, চুলের বিভিন্ন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *